ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সংবেদনশীলতা নেই: মেনন

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য নীতি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের সংলাপে বক্তারা। ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি
ছবি: সংগৃহীত

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য কোনো উদ্যোগ বা নীতি নিতে গেলে সেখানে আমলাদের চিন্তাভাবনার প্রভাব থাকে। মেনন বলেন, এসব জাতিগোষ্ঠীর অধিকার–সংক্রান্ত ‘ইনডিজিনাস বিল’ প্রস্তাব আকারে সংসদে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি বিবেচনার জন্য যে দৃষ্টিভঙ্গি বা উদ্যোগ দরকার, সেটা দেখা যায়নি।

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য নীতি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের সংলাপে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন মেনন। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর ওয়াইডব্লিউসিএ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিজিনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস (আইপিডিএস)। সহযোগী হিসেবে ছিল ইউএনডিপির হিউম্যান রাইটস প্রজেক্ট।

সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চাকরির ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কথা বলা হলেও সমন্বিতভাবে একটি নীতি করা দরকার। দেশে ১৯৭২–পরবর্তী সময়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতি যতটা সংবেদনশীলতা ছিল, এখন আর ততটা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ আরমা দত্ত বলেন, পার্বত্য এলাকার এবং সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে যে বৈষম্য, বঞ্চনা ও দারিদ্র্য তৈরি হয়েছে, তা কমছে না। অনেক ধরনের কাজ হচ্ছে, কিন্তু মূল সমস্যা বিচ্ছিন্নভাবে কাজ, কোনো সমন্বয় নেই।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য নীতিমালা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম। তিনি সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, এ-সংক্রান্ত বিল যাতে সংসদে ওঠে, সে জন্য স্পিকারের নজরে আনতে সাংসদদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ইউএনডিপি ঢাকা কার্যালয়ের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার অ্যান্ড্রু ম্যাকগ্রেগর বলেন, পাহাড়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সমস্যা এক রকমের, আবার সমতলে আরেক রকম। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঠিক সংখ্যা এখন কত, সেটিও স্পষ্ট নয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের উন্নয়ন ও বৈষম্য রোধে নীতিমালা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য নীতি নিয়ে আইপিডিএস আয়োজিত সংলাপ। ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি
ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের কথা এসেছে ঠিকই, কিন্তু তাদের প্রতি বৈষম্য চলমান বলে সভায় উল্লেখ করেন আইপিডিএসের সভাপতি সঞ্জীব দ্রং। তিনি বলেন, ফলে হতাশা ও দেশান্তরি হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে দেশে মোট ২৭টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছিল। তবে ২০১৯ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের গেজেটে বলা হয় ৫০টি।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর ঢাকা কার্যালয়ের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অ্যালেক্সিস চিসাম বলেন, করোনা মহামারিতে অনেকে চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কৃষক বা বেকারদের জন্য সরকারের আলাদা কোনো প্রণোদনা বা উদ্যোগের কথা জানা যায় না।