গুলশানে গৃহবধূ হত্যায় স্বামীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

হাসনা হেনা

রাজধানীর গুলশানে গৃহবধূ হাসনা হেনা ওরফে ঝিলিক (২৬) হত্যার অভিযোগে তাঁর স্বামী সাকিব আলমসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাতে হাসনা হেনার মা তাহমিনা হোসেন ওরফে আসমা বাদী হয়ে গুলশান থানায় এই হত্যা মামলা করেন।

মামলা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে গুলশান থানার পুলিশ। মামলা অপর আসামিরা হলেন হাসনা হেনার শ্বশুর জাহাঙ্গীর আলম (৬২), শাশুড়ি সাঈদা আলম (৫৮), দেবর ফাহিম আলম (৩২) ও জা টুকটুকি আক্তার (৩০)।

হাসনা হেনার স্বামী সাকিব আলমকে গতকালই হাসপাতাল থেকে আটক করে পুলিশ। তাঁকে এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ রোববার আদালতে হাজির করার কথা। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে সাকিব আলমের রিমান্ডের আবেদন জানাবে পুলিশ।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এই ঘটনায় গতকাল হাসপাতাল থেকে সাকিব আলম ও তাঁদের বাড়ি থেকে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আজাদকে আটক করা হয়। আজাদকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর সাকিব আলমকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এজাহারভুক্ত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

হাসনা হেনা গুলশান-২-এ ৩৬ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে থাকতেন। সেটি তাঁর শ্বশুরবাড়ি। গতকাল সকালে হাসনা হেনাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তাঁর লাশ গাড়িতে নিয়ে স্বামী সাকিব আলম হাতিরঝিলে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজান বলে গুলশান ও হাতিরঝিল থানার পুলিশ সূত্র জানায়।

পুলিশ জানায়, নিহত নারীর গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন ও দুই পায়ে বাঁধার চিহ্ন আছে। এ ছাড়া শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে, কপালে ও মাথায় হালকা আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মামলায় বলা হয়, গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল সকাল আটটার মধ্যে গুলশানের বাসায় ওই হত্যার ঘটনা ঘটে। আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে হাসনা হেনাকে হত্যার পর ঘটনা গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় বলা হয়, বিয়ের পর জানা যায়, হাসনা হেনার স্বামী সাকিব আলম মাদকাসক্ত। তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের প্ররোচনায় হাসনা হেনাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন।

তাহমিনা হোসেন বলেছেন, হাসনা হেনাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কয়েক মাস আগে তাঁর মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বের করে দিয়েছিলেন। হাসনা হেনার নয় মাস বয়সী একটি ছেলে আছে।

তাহমিনা হোসেন আরও বলেছেন, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০১৮ সালে হাসনা হেনাকে বিয়ে করেন সাকিব। কিন্তু তাঁরা গরিব বলে বিয়ের শুরু থেকে শ্বশুরবাড়ির সবাই মিলে হাসনা হেনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন অনেক ধনী। গুলশান-২ নম্বরে তাঁদের তিনটি ফ্ল্যাট আছে। গুলশানে তাঁদের মার্কেট ও পল্টনে কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে। পুরান ঢাকাতেও দুটি ভবন আছে তাঁদের।

অভিযোগের বিষয়ে নিহত নারীর শ্বশুর জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেন, মেরে ফেললে সাকিব মেরেছেন। এর সঙ্গে অন্যরা যুক্ত নয়। তাঁরা কোনো শব্দ বা চিৎকার শোনেননি।