‘অর্ডার’ করে টাকা দিয়েছেন গ্রাহক, পণ্য পেয়েছে হ্যাকার চক্র

ওয়েবসাইট হ্যাক করে ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের পণ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি
ছবি: সংগৃহীত

ফেয়ার মার্ট নামের একটি বাংলাদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন ব্যক্তির ইউজার আইডি হ্যাক করে মাত্র আট দিনে পাঁচ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক পণ্য হাতিয়ে নিয়েছে একটি হ্যাকার চক্র। পণ্যের ফরমাশ বা অর্ডার দেওয়া গ্রাহকের তথ্য ও মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন করে নিজেদের নামে এসব পণ্য সরবরাহ বা ডেলিভারি নিয়েছে চক্রটি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) বলছে, ফেয়ার মার্টে স্যামসাং ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য ফরমাশ দিয়ে টাকা পরিশোধ করেছিলেন ১০ জন গ্রাহক। তাঁদের মুঠোফোন নম্বরে এই খুদে বার্তা আসে যে তাঁদের পণ্য সরবরাহ হয়েছে। যদিও তাঁরা তা পাননি। পরে গ্রাহকেরা বিষয়টি ফেয়ার মার্টকে জানান। ফেয়ার মার্ট বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগকে জানায়। এই বিভাগ ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।

গত ২৮ মে থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের পণ্য হাতে নেওয়া শুরু করেন চক্রের সদস্যরা। তাঁদের এই প্রতারণা চলতে থাকে ধরা পড়ার আগপর্যন্ত, অর্থাৎ ৫ জুলাই পর্যন্ত।

ডিবি জানিয়েছে, গতকাল বুধবার ঢাকা ও চাঁদপুর থেকে হ্যাকার চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হ্যাকার চক্রের মূল হোতা শহীদুজ্জামান ওরফে রনি (৩৮) এবং তাঁর দুই সহযোগী মাজহারুল ইসলাম ওরফে রুবেল (২৬) ও আমিন আজাদ (২৮)। তাঁদের কাছ থেকে একটি কম্পিউটার, সাতটি মুঠোফোন, একটি রেফ্রিজারেটর, একটি টেলিভিশন ও ২৯টি ভুয়া সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রতারকদের হাতিয়ে নেওয়া ইলেকট্রনিকস সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয় ডিবির অভিযানে
ছবি: সংগৃহীত।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট হ্যাক করেন। কারসাজি করে পণ্য নেওয়ার পর তাঁরা ওয়েবসাইটটি থেকে নিজেদের নাম–ঠিকানা মুছে ফরমাশ দেওয়া গ্রাহকের তথ্য যুক্ত করে দিতেন। তিনি আরও বলেন, গ্রাহকেরা প্রতারিত হলেও ফেয়ার মার্টের কেউ বিষয়টি বুঝতে পারেননি। কিন্তু গ্রাহকেরা অভিযোগ করার পর ঘটনা সামনে আসে।

ডিবি জানায়, চক্রের মূল হোতা শহীদুজ্জামান এইচএসসি পাস করার পর আর পড়াশোনা করেননি। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে থেকেই ২০০৩ সালের পর আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন শহীদুজ্জামান। তাঁর কম্পিউটার বিষয়ে নানা প্রশিক্ষণ রয়েছে। তাঁর সহযোগী মাজহারুল ইসলাম ঢাকা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করতেন এবং বিক্রি করতেন। আরেক সহযোগী আমিন আজাদ একসময় একটি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর কোম্পানিতে সিম বিক্রির চাকরি করতেন। তিনি মূলত অন্য ব্যক্তিদের নামে নিবন্ধিত সিম কার্ড সংগ্রহ করতেন।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, চক্রের সদস্যরা এর আগেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করেছেন। এই চক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না, সেটা জানার চেষ্টা চলছে।

ফেয়ার মার্ট মূলত ফেয়ার গ্রুপের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব বিজনেস মো. আতাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এক কর্মকর্তার ইউজার আইডি হ্যাক করেছিল চক্রটি। গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের বিশেষজ্ঞ দল ডিবির সঙ্গে কাজ করে চক্রটিকে শনাক্ত করেছে।’ তিনি বলেন, এ ঘটনায় গ্রাহকের কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সুরক্ষাব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।