ঘরের সব ধরনের কাজ করতে হবে সবাইকে

গৃহস্থালির কাজ শুধু নারীর, এই ধারণা পাল্টাতে হবে। ঘরের কাজে অংশ নিতে হবে পুরুষকেও।

পরিপূর্ণ মানুষ হতে হলে ঘরের সব ধরনের কাজ শিখতে হবে। শুধু নারী নয়, পুরুষকেও গৃহস্থালির কাজে অংশ নিতে হবে। তাহলেই একটি সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে, যেখানে নারী বা পুরুষের জন্য নির্ধারিত কাজ বলে কোনো বিভাজন থাকবে না।

নেদারল্যান্ডস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায়, বেসরকারি সংস্থা একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল ও প্রথম আলো বন্ধুসভার যৌথ উদ্যোগে গত মঙ্গলবার ‘গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন আনবে সমতা, করবে উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘একশনএইড–প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় বিতর্ক উৎসব–২০২০’–এর ফাইনাল রাউন্ড উপলক্ষে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।

ছেলে–মেয়েকে সমান চোখে দেখতে হবে। পরিবারের ছোট সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও নারীকে বাদ দেওয়া যাবে না।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, নারীদের গৃহস্থালির কাজের মূল্যায়নের স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিকভাবে দাবি উঠছে। কিন্তু সেটা শুরু করতে হবে নিজের পরিবারে নারীকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে। ছেলে–মেয়েকে সমান চোখে দেখতে হবে। পরিবারের ছোট সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও নারীকে বাদ দেওয়া যাবে না।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের তাগিদ দেন। তিনি বলেন, নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হয়ে এলেই ভালো। ঘরে বসে মনোনয়নের প্রথা পরিবর্তন করা দরকার।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, ‘গ্রামে গিয়ে দেখি, নারীরা ঘরের কাজ করছেন, মাঠের কাজও করছেন। কিন্তু তাঁদের কাজের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। নারীরা কঠোর পরিশ্রম করেন, কিন্তু পুরুষের তুলনায় মজুরি পান অর্ধেক বা তারও কম।’

অবশ্য সমাজে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখেন শিরীণ আখতার। তিনি বলেন, এখন অনেক ছেলেমেয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। মেয়েরা লেখাপড়ায় এগিয়ে গেছে। আরও এগিয়ে যেতে নারীশিক্ষার ওপর আরও জোর দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক মাহবুবা নাসরিন গত দুই দশকে নারীর অগ্রযাত্রায় অর্জিত সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নারীর জীবনযাত্রার মান, প্রজননস্বাস্থ্য, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, শিক্ষা এবং নারী ও পুরুষের সমতা অর্জনে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এরপরও ঘরের কাজকে এখনো শুধু নারীর কাজ হিসেবেই দেখা হয়। এই শ্রমবিভাজন দূর করা জরুরি।

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একজন নারী নানা ধরনের কাজ করেন। কিন্তু এসব কাজের স্বীকৃতি নেই। তিনি নারীর গৃহকর্মের স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা এবং সুযোগ–সুবিধা প্রাপ্তি কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে ভাবার তাগিদ দেন।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, গৃহের প্রতিটি কাজই মূল্যবান। এ কাজ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে। নারী–পুরুষ উভয়কেই ঘরের কাজ করতে হবে। বিতর্কের মাধ্যমে যুক্তি–তর্ক উপস্থাপন করে এ বিষয়ে নারী–পুরুষ উভয়কেই সচেতন করতে হবে।

এখন অনেক ছেলেমেয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। মেয়েরা লেখাপড়ায় এগিয়ে গেছে। আরও এগিয়ে যেতে নারীশিক্ষার ওপর আরও জোর দিতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার

বিতার্কিকেরা যুক্তি, জ্ঞান ও মেধা কাজে লাগিয়ে নারীর পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার। তিনি বলেন, সমাজে মেয়েরা এখনো নানা বিধিনিষেধের মধ্যে বড় হয়। যদিও একটি অনিরাপদ সমাজের মধ্যেও তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাদের মেধা, যোগ্যতা ও অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর যুব কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানপ্রধান মুনির হাসান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর কমিশনার এফ এইচ আরিফ এবং প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মুমিত আল রশিদ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক মৌসুমি মৌ ও কোষাধ্যক্ষ জাফর সাদিক।

আলোচনা পর্ব শেষে ‘একশনএইড-প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় বিতর্ক উৎসব–২০২০’–এর ভার্চ্যুয়াল ফাইনাল রাউন্ডের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রথম হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফসারুল আলম খান, দ্বিতীয় হন রংপুরের ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলের শিক্ষার্থী অনন্যা ভট্টাচার্য এবং তৃতীয় হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুনুজ্জামান। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিচারক প্যানেলের সভাপতি ছিলেন আব্দুন নূর তুষার। এ ছাড়া সদস্য ছিলেন সাবেক বিতার্কিক আবদুল্লাহ আহমেদ চৌধুরী, উত্তম রয়, শান্তা তাওহিদা, জাফর সাদিক ও সজল মিত্র।