চলতি পথে চাইলে বসুন, খান পানি-বিস্কুট

রিকশাচালক বারিকুল কাজের ফাঁকে বিস্কুট খাচ্ছেন
ছবি: প্রথম আলো

একটি টুলের ওপর রাখা পানির ফিল্টার। ফিল্টারের ওপর একটি মগ। পাশে চেয়ার। কাছাকাছি দেয়ালে ঝুলছে একটি ঝুড়ি। কাছে গেলে দেখা যায়, ঝুড়ির ভেতর একটি বয়ামে বিস্কুট রাখা। রিকশাচালক বারিকুল ইসলাম চেয়ারে বসে টোস্ট বিস্কুট খাচ্ছিলেন। ভাড়া যাবেন কি না, জানতে চাইলে সম্মতি জানিয়ে ফিল্টার থেকে পানি পান করে রওনা দিলেন।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার টেনামেন্ট–৩ ভবনের বাইরে কয়েক দিন ধরে পানি ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানালেন বারিকুল। ওই এলাকায় ছয় মাস ধরে রিকশা চালান তিনি। এসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। তিনি বলেন, এলাকা লাগোয়া আজিজ সড়কে থাকেন। সকালে রিকশা নিয়ে বের হন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হালকা খিদে অনুভূত হওয়ায় বিস্কুট–পানি খেয়ে নিলেন।

টেনামেন্ট–৩–এর দেয়ালে সাদা কাগজে কিছু উপদেশমূলক বার্তা সাঁটানো ছিল। একটিতে লেখা, দানে বাড়ে ধন। ঝুড়ির আঁকানো ছবির সঙ্গে লেখা, ‘চাইলে এখানে খাবার রাখতে পারেন। হোক তা সামান্য!’। চেয়ারের ছবির সঙ্গে লেখা, বসে বসে পানি পান, শরীর–মনে শান্তি দান। আরেকটি কাগজে পানির গ্লাসের ছবির সঙ্গে লেখা, ‘আপনার জন্য বিশুদ্ধ পানি’। প্রতিটি বার্তার নিচে শেয়ার ইওর বেস্ট (shareURbest) নামে ফেসবুক পেজের ঠিকানা যুক্ত করা। ফেসবুক পেজ থেকে মুঠোফোন নম্বর নিয়ে কথা হয় এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত সাদীয়াহ সাখাওয়াতের সঙ্গে।

সাদীয়াহ সাখাওয়াত একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। সন্তান ছোট হওয়ায় শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। খাবার পানির ব্যবস্থাকে অত্যন্ত ছোট উদ্যোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বড় কিছু করার মতো সামর্থ্য নেই আমাদের অনেকের। আবার আমরা অনেকেই অন্যের কল্যাণে কিছু করতে চাই। কিন্তু সামর্থ্য কম থাকায় দ্বিধা থেকে কিছু করা হয় না। তাই ভাবলাম, অল্প করেই কিছু শুরু করি। এখন বেশ কয়েকজন এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন।’

ঝুড়িতে রাখা বিস্কুটের বয়াম
ছবি: প্রথম আলো

মহুয়া ফেরদৌসি, শাহনাজ হারুন, জাকিয়া মল্লিক, রাশি আক্তারসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে সাদীয়াহ বলেন, অল্প কদিনেই উদ্যোগটির সঙ্গে থাকার জন্য অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ উদ্যোগে যাঁরা যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় না। দান হিসেবে শুধু বিস্কুট নেওয়া হয়। বেলা ১১টার দিকে বিস্কুট ও টিউবওয়েলের ঠান্ডা পানি রেখে আসা হয়। খালি হলে আবার ভরে দেওয়া হয়। সড়কটি বেশ লম্বা। আবার সকাল–সন্ধ্যায় এখানে অনেকে হাঁটতে আসেন। অনেকে বাজার করতে আসেন। পথ চলতে কেউ যদি তৃষ্ণা মেটাতে চান বা বিস্কুট খেতে চান, তাহলে এখান একটু বসে যেতে পারেন।

সাদীয়াহ জানান, কল্যাণকর কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে শেয়ার ইওর বেস্ট নামে ফেসবুক পেজ খুলেছেন। যাঁরা অন্যের কল্যাণে কিছু করেন বা করার চিন্তা করছেন, তাঁদের ভাবনা পেজে তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যে একজনের একটি ভাবনা তাঁরা কার্যকর করার চিন্তাভাবনা করছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর সঙ্গে থাকা সেবাদানকারীদের মধ্যে কয়েকজনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা। কারণ হাসপাতাল থেকে দেওয়া রোগীর খাবার বেশির ভাগ সময় ভাগ করে খেতে হয় সেবাদানকারীকে। এতে রোগী ও সেবাদানকারী কেউই পেট ভরে খাওয়ার সুযোগ পান না।