চিঠি চালাচালি হয়, মার্কেট আর চালু হয় না

মার্কেটে ডিএসসিসি পেয়েছে ২৫টি দোকান। এর মধ্যে ২১টি পুরোনো মার্কেটের ২১ দোকানিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

নির্মাণকাজ শেষে রমনা শপিং কমপ্লেক্সটি ব্যবহার উপযোগী হয়ে আছে গত ৮ বছর ধরে। কিন্তু দাপ্তরিক জটিলতায় আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো চালু হয়নিপ্রথম আলো

রাজধানীর রমনা এলাকার মার্কেটটিতে লন্ড্রি ছিল শচীন কুমার দাসের। মার্কেটের জায়গায় বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলে দোকান ছেড়ে দিতে হয় তাঁকে। নির্মাণকাজ শেষ হলে নতুন মার্কেটে তাঁর একটি দোকান পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আট বছর আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও মার্কেটের উদ্বোধন হয়নি। এর মধ্যে মারা গেছেন শচীন।
কেবল শচীন নন, তাঁর মতো আরও ছয়জন পুরোনো দোকানি মারা গেছেন। চিঠি চালাচালি ও দাপ্তরিক জটিলতায় মার্কেটের উদ্বোধন আটকে যাওয়ায় তাঁদের আর নতুন দোকানে ফেরা হয়নি।

পুরোনো রমনা থানার দক্ষিণ পাশের মার্কেটটির নাম রমনা শপিং কমপ্লেক্স। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মালিকানাধীন মার্কেটটি আগে মগবাজার রোড সাইড সিটি করপোরেশন মার্কেট নামে পরিচিত ছিল।
ডিএসসিসির সূত্র জানায়, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার আমলে ২০০৩ সালে প্রায় ৯ কাঠা জায়গায় বহুতল মার্কেট ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০৬ সালে ছয়তলাবিশিষ্ট ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১২ সালের জুনে কাজ শেষ হয়। অংশীদারত্বের ভিত্তিতে মাসুদ করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ভবন তৈরির কাজ করেছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করপোরেশনের চুক্তি অনুযায়ী, ছয়তলা ভবনের ২৫ শতাংশ পাবে করপোরেশন, আর ৭৫ ভাগ থাকবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের। তবে জমির মালিকানা থাকবে সিটি করপোরেশনের নামে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তার ভাগে পাওয়া দোকান বিক্রি করুক বা সেলামি দিয়ে বরাদ্দ দিক, দোকানের মাসিক ভাড়া করপোরেশন পাবে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মার্কেটে ডিএসসিসি পেয়েছে ২৫টি দোকান। এর মধ্যে ২১টি পুরোনো মার্কেটের ২১ দোকানিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

মার্কেটের নির্মাণকাজের দেখভাল করছে ডিএসসিসির অঞ্চল-১ (নগর ভবন)। অঞ্চলের প্রকৌশলীরা বলছেন, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর আনসার সদস্যরা প্রায় দুই বছর এটি আবাসিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করেন। এরই মধ্যে বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। এভাবে চলে যায় আরও দুই বছর। এরপর এই মার্কেটের ফাইল বিভিন্ন দপ্তরে চালাচালি হয়েছে। সবশেষ ২০১৮ সালে ডিএসসিসির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান মার্কেটটি চালুর উদ্যোগ নেন। একপর্যায়ে এটি চালুর সিদ্ধান্ত হয়। পরে অঞ্চল-১ থেকে সংস্থাটির সম্পত্তি বিভাগকে এটি বুঝে নিতে চিঠি দেওয়া হয়। পরে সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে দেখেন, কিছু কাজ বাকি। এসব কাজ শেষ করতে ওই বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। পরে অঞ্চল-১ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দ্রুত শেষ করতে চিঠি দেয়। এরপর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তিন মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করে। এরপর করোনা পরিস্থিতিতে মার্কেট চালুর প্রক্রিয়া আবার থমকে যায়।


ডিএসসিসি সূত্র বলছে, সর্বশেষ সম্পত্তি বিভাগকে মার্কেট বুঝে নিতে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর সম্পত্তি বিভাগ অঞ্চল-১–কে জানায়, মার্কেটে এখনো জেনারেটর বসানো হয়নি। অবশ্য করপোরেশনের সঙ্গে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের চুক্তিতে জেনারেটর বসানোর কথা ছিল না। এরপরও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে জেনারেটর বসানোর অনুরোধ করা হয়।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাসুদ করপোরেশনের মালিক খন্দকার শফিকুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর করপোরেশন থেকে দুই দফা চিঠি পেয়ে তিনি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছেন। সবশেষ লিফট সচলসহ শৌচাগার সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন। চুক্তিতে না থাকা সত্ত্বেও সোলার প্যানেল বসিয়েছেন। জেনারেটরও বসানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

সব কাজ শেষে অঞ্চল-১ থেকে সংস্থাটির সম্পত্তি বিভাগকে মার্কেট বুঝে নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হবে। সম্পত্তি বিভাগ বুঝে নেওয়ার পর রাজস্ব বিভাগকে জানাবে। এরপর রাজস্ব বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে বরাদ্দপ্রাপ্তদের দোকান বুঝিয়ে দেবে। পরে রাজস্ব আদায়ে মাসিক ভাড়া তুলবে।


অঞ্চল-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা ফাইল সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছেন।


মার্কেট চালু না হওয়ায় আক্ষেপ জানিয়ে রমনা শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সম্পাদক আবদুল লতিফ খান বলেন, দোকানিরা আর কতকাল অপেক্ষা করবেন। পেটের দায়ে অনেকে দোকান চালু করেছেন। তবে করপোরেশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে দোকান বুঝিয়ে দিতে হবে।