জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
একুশে পদক পাওয়া সাংবাদিক ও দ্য ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ।
আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিভাবক হারিয়েছি। যেকোনো সংকটে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। তিনি পরামর্শ দিতেন।’
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে সাংবাদিকসমাজের যে ক্ষতি হলো, তা পূরণ হওয়ার নয় বলে উল্লেখ করেন ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, সাংবাদিকতার সব বড় দায়িত্ব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ পালন করেছেন। সাংবাদিকতার স্বাধীনতার যে আন্দোলন, সেখানে একজন উচ্চকণ্ঠ হারিয়েছেন সবাই। তাঁর পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানান তিনি।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের কাজ সংরক্ষণ করার কথা বলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি।
সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘সাংবাদিকতার যত গুণ আছে, সব ছিল রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মধ্যে। সাংবাদিকদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে তিনি সমন্বয়ের ভূমিকা পালন করতেন। নতুন প্রজন্ম তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।’
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম বলেন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদক পরিষদের একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সাংবাদিকতার সুষ্ঠু পরিবেশের আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি উদার মনোভাবের ছিলেন। তাঁর সাংবাদিকতার মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংবাদিকতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকতা জগতে যেকোনো বিরোধ মেটাতে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভূমিকা পালন করতেন। তিনি সবাইকে অনুপ্রাণিত করতেন।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘বাবার কাছে আমরা ছিলাম রক্তের সম্পর্কের পরিবার। এর বাইরে তাঁর বড় পরিবার ছিল সাংবাদিকসমাজ। তিনি প্রেস ফ্রিডম, সাংবাদিকদের অধিকারের জন্য কাজ করেছেন।’
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের জন্য সবার কাছে দোয়া চান মাসরুর রিয়াজ।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানাতে আরও উপস্থিত ছিলেন তাঁর ভাই কর্নেল জয়নাল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এ ছাড়া এডিটরস গিল্ড, ডিআরইউ, বিএফইউজে, ডিইউজে, নিউজ টুডে, পিআইবি, ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরাম, ওকাব, প্রেসক্লাব কর্মচারী ইউনিয়নসহ অনেকে সংগঠনের পক্ষ থেকে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ চার মেয়াদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। প্রেসক্লাব জানায়, তিনি ১৯৪৫ সালের ৩০ নভেম্বর নরসিংদীর মনোহরদীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান অবজারভারে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। সাংবাদিকতা জীবনে তিনি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক এবং নিউজ টুডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেন। অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন তিনি।
পরিবার জানিয়েছে, আজ বাদ জোহর জন্মস্থান মনোহরদীতে এবং বাদ আসর রাজধানীর দূতাবাস রোডের বারিধারা জামে মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মরদেহ দাফন করা হবে।