জামিন জালিয়াতির ঘটনায় আইনজীবী গ্রেপ্তার

হাতকড়া
প্রতীকী ছবি

মারধর ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে বগুড়ার এক মামলায় ‘ভুয়া আগাম জামিন’ আদেশ তৈরির ঘটনায় করা মামলায় ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রাজু আহমেদ রাজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চকে আজ বুধবার বিকেলে ওই তথ্য জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।

‘ভুয়া আগাম জামিন’ আদেশের বিষয়টি নজরে এলে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ সকালে হাইকোর্ট দুই সপ্তাহের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আগামী ১২ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘যদি জালিয়াত চক্রকে ধরা না যায়, তাহলে বিচারক ও আইনজীবী থাকার দরকার কি ? কেননা তারা সিল বানিয়ে রায় ও আদেশ দিচ্ছে। জালিয়াত চক্রকে কেন ধরা যাচ্ছে না ? তাদের ধরতে হবে ও আইনের আওতায় আনতে হবে।’

পরে বিকেলে আইনজীবী রাজু আহমেদ রাজীব গ্রেপ্তার হন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট জাল-জালিয়াতির ওই ঘটনা অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডির) নির্দেশ দেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদন ৯ জুন আদালতে দাখিল করা হয়। সিআইডির অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দুজন আইনজীবীসহ চারজন জড়িত থাকার কথা বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ সকালে ‘ভুয়া আগাম জামিন’ আদেশ তৈরির ঘটনায় করা ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. সুলতান হোসেন আদালতে হাজির হন।

হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩০ আসামি ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন বলে ওই ‘ভুয়া আদেশে’ উল্লেখ করা হয়। তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি এ ধরনের কোনো আদেশ দেননি ওই বেঞ্চ। এই বেঞ্চে আগাম জামিন আবেদনের শুনানিও হয়নি।

সকালে সুলতান হোসেন আদালতে বলেন, ওই মামলায় আইনজীবীর সহকারী মো. সোহাগ শেখকে ৯ মে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অনেকের নাম এসেছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শুনানি নিয়ে আদালত ১২ জুলাই পরবর্তী দিন রাখেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারাননুম রাবেয়া।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ আদালতের নথি কাল্পনিকভাবে তৈরি করে জামিনসংক্রান্ত আদেশ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরিতে বগুড়া আইনজীবী সমিতির সদস্য তানজীম আল-মিসবাহ, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য রাজু আহমেদ রাজীব, আইনজীবীর সহকারী সোহাগ শেখ ও কম্পিউটার অপারেটর মো. মাসুদ রানা এবং তাঁদের সহযোগী অন্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা জড়িত।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারাননুম রাবেয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুসন্ধানে নাম আসার পরও আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছেন। যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করে ১২ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিকেলে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, রাজু আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা আদালতকে অবহিত করা হয়েছে।’

তদন্ত কর্মকর্তা সুলতান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ জাল-জালিয়াতির ঘটনায় ২৮ এপ্রিল শাহবাগ থানায় ওই মামলা হয়। আজ বিকেলে মৎস্য ভবন এলাকা থেকে রাজু আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাঁকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হবে। রাজুকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি হাইকোর্টকে অবহিত করা হবে।’

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুসারে, বগুড়ায় মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখল নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। এর মধ্যে মারপিট ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় বগুড়ার ৩০ আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে ঘুরে বেড়ানোর প্রেক্ষাপটে বগুড়ার এক ব্যক্তির অনুরোধে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী তাঁদের জামিনের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য ওই আদেশ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে খোঁজ নেন ও রাষ্ট্রপক্ষকে দেখান।

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩০ আসামি ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন বলে ওই ‘ভুয়া আদেশে’ উল্লেখ করা হয়। তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি এ ধরনের কোনো আদেশ দেননি ওই বেঞ্চ। এই বেঞ্চে আগাম জামিন আবেদনের শুনানিও হয়নি। জামিন আবেদনের নম্বর হচ্ছে, ৪০, ৫৪২/২১। অথচ সংশ্লিষ্ট শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত দায়ের হওয়া আবেদনে নম্বর হচ্ছে ৯, ২৩০/২১। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। হাইকোর্ট আমিনুল ইসলাম, মো. আলিম, মো. আনোয়ার মণ্ডল, লিটন প্রামাণিক, মো. বাদলসহ ৩০ আসামিকে গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারাননুম রাবেয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের পর মারপিট ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ওই মামলায় গত ৩ মার্চ ১৪ আসামি এবং ৪ মার্চ ১৬ আসামি বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুল ইসলামের বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জড়িতদের নাম বেরিয়ে আসে।’