টিকার বাইরে গোরখোদকেরা

ঢাকার ৯ টি কবরস্থানে ১৭৯ গোরখোদকের বাইরে কর্মী আছেন আরও ৬৩ জন।

করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনের কাজে যুক্তদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। সম্প্রতি রাজধানীর রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে
ছবি: প্রথম আলো

মো. জবান আলী। ৪৮ বছর বয়সী এই ব্যক্তি রাজধানীর খিলগাঁও কবরস্থানের গোরখোদক। তিনি করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ১৯১ জন ব্যক্তিকে দাফন করেছেন। দেশজুড়ে শর্তসাপেক্ষে গত ৭ ফেব্রুয়ারি করোনার গণটিকা কার্যক্রম চললেও সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে তিনি এখনো এ টিকা পাননি।

শুধু জবান আলী নন, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের অধীনের থাকা নয়টি কবরস্থানের ১৭৯ গোরখোদকও টিকা পাননি। বেশ কয়েকজন গোরখোদক, কবরস্থানগুলোর দায়িত্বে থাকা মোহরার ও করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। অথচ ‘মৃত ব্যক্তির সৎকার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি’র কোটা ব্যবহার করে অন্যরা টিকা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

তাঁরা করপোরেশনের স্থায়ী কর্মী নন। এরপরও করোনা মহামারি বিবেচনায় গোরখোদকেরা যাতে বাদ না পড়েন, সেই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
আতিকুল ইসলাম, মেয়র, ডিএনসিসি

মহামারিবিদ্যাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সাময়িকী ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেস-এ গত ৯ মার্চ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ২৯ দশমিক ৬ শতাংশের সংক্রমিত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। তবে রাজধানীর গোরখোদকদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কি না, তা জানা যায়নি।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের কার্যকরী সদস্য ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) সাবেক পরিচালক এ এম জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনের কাজে যুক্তদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

ঢাকার নয়টি কবরস্থানের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনে তিনটি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) আছে ছয়টি। এসব কবরস্থানে ১৭৯ গোরখোদকের বাইরে কর্মকর্তা, মালি ও নিরাপত্তাকর্মী মিলিয়ে জনবল আছেন আরও ৬৩ জন। সিটি করপোরেশনের অধীনে কাজ করলেও গোরখোদকেরা সিটি করপোরেশনের স্থায়ী কর্মী নন।

আজিমপুর কবরস্থানে ২৫ বছর ধরে কবর খোঁড়া ও পরিচর্যার কাজ করছেন মো. হান্নান (৫৫)। তিনি বলেন, কীভাবে নিবন্ধন করতে হয়, কোথায় গিয়ে টিকা নিতে হয়—এসব সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানেন না। রায়েরবাজার কবরস্থানের গোরখোদক সিরাজ ভূঁইয়া বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে অবশ্য তালিকা নিয়ে গেছে দুই মাস আগে। কিন্তু এরপর কেউ কিছু জানায়নি।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কবরস্থানে লাশ দাফন ব্যবস্থাপনায় যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা করপোরেশনের স্থায়ী কর্মী নন। এরপরও করোনা মহামারি বিবেচনায় গোরখোদকেরা যাতে বাদ না পড়েন, সেই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইনে সুরক্ষা ওয়েবসাইট ও অ্যাপে অগ্রাধিকার তালিকায় ২১টি ক্যাটাগরি আছে। এর মধ্যে একটি কোটা হচ্ছে ‘মৃত ব্যক্তির সৎকার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, এই কোটা ব্যবহার করে তিনি গত ২০ ফেব্রুয়ারি টিকা নিয়েছেন। তাঁর পরিচিত অন্তত নয়জন একইভাবে টিকা নিয়েছেন। একটি বেসরকারি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, তাঁর অফিসের অন্তত চারজন একইভাবে টিকা নিয়েছেন।

‘মৃত ব্যক্তির সৎকার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি’র কোটায় অন্য ব্যক্তিদের টিকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র রোবেদ আমিন বলেন, টিকার নিবন্ধনের প্রথম দিকে কিছু অসংগতি ছিল। বর্তমানে পরিচয় লুকিয়ে এমনটি করতে পারার কথা নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই মুখপাত্র আরও বলেন, কবরস্থানের কর্মীরা করোনার টিকা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। তবে তাঁদের কোনো সমিতি বা সংগঠন থাকলে, তারা সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএসে এসে জানালে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষও এ উদ্যোগ নিতে পারে।