‘ঢাকায় এসেই বিপদে পড়েছি’

দুই হাতে ভারী দুটি ব্যাগের সঙ্গে মা, বড় বোন ও ভাগনিকে নিয়ে ৪০ মিনিট ধরে হাঁটছেন শেখ শাহিনছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর রামপুরায় বাসচাপায় শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয় নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার চেয়ে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। চালকের লাইসেন্স ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গাড়ি ছাড়ার কারণে এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ পথে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন।

বড় বোনের অসুস্থতার কথা শুনে তাঁকে দেখতে বের হয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী আয়েশা খাতুন। মালিবাগ রেলগেট থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত হেঁটে এসেছেন। যাবেন উত্তর বাড্ডায় বড় বোনের বাসায়। তিনি বলেন, ‘আমার বড় বোন হার্ট অ্যাটাক করেছে। তাকে দেখতে যাব বলে বের হয়েছি। কিন্তু মালিবাগ থেকেই সব গাড়ি আটকে আছে। কোনো গাড়ি চলছে না। আধা ঘণ্টা ধরে হাঁটছি। মানুষ বেশি হওয়ায় ফুটপাত দিয়েও হাঁটা কঠিন। এই বয়সে এভাবে হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’

শেখ শাহিন এসেছেন ফরিদপুর থেকে। দুই হাতে ভারী দুটি ব্যাগ। সঙ্গে মা, বড় বোন ও ভাগনি। ঢাকায় বড় বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছেন তাঁরা। বোনের কোলে ভাগনি। দুই হাতে দুটি ভারী ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে কষ্ট হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মালিবাগে বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে। হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে আমরা হাঁটছি। বোনের বাসায় যেতে আরও আধা ঘণ্টা সময় লাগবে। ঢাকায় এসেই এমন বিপদে পড়েছি আমরা।’

কুমিল্লায় মৃত ভাতিজাকে দেখতে যাওয়ার জন্য গাড়ি না পেয়ে রিকশার অপেক্ষায় শামসুল হক
ছবি: প্রথম আলো

তীব্র এ যানজটে পড়েছেন সত্তরোর্ধ্ব শামসুল হক। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে রামপুরায় রিকশার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। যাবেন যাত্রাবাড়ী। সেখান থেকে যাবেন কুমিল্লায়। সকালে বাড়ি থেকে ফোন পেয়েছেন, তাঁর ভাতিজা স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো হাঁটতে পারি না। অনেকক্ষণ ধরে রিকশা খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না। এমনি ভাতিজার মৃত্যুতে মনে শোক, তার ওপর এমন অবস্থায় পড়ে আর কিছু ভালো লাগছে না।’

বাসচাপায় এসএসসির ফলপ্রত্যাশী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয় নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার চেয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে রামপুরায় মানববন্ধন ও সড়ক আটকে করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। বি এ এফ শাহীন কলেজ, ইম্পিরিয়াল কলেজ, একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। এ সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

দুর্জয় নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার চাওয়া ছাড়াও গণপরিবহনে হাফ পাস নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রোগী আর পরীক্ষার্থীদের গাড়ি আলাদা লেন করে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন তাঁরা। রামপুরা থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এই সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা।

বোন হার্ট অ্যাটাক করেছেন, তাঁকে দেখতে হাঁটাপথে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন আয়েশা খাতুন
ছবি: প্রথম আলো

এর আগে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রামপুরায় রাস্তা পার হওয়ার সময় দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় চাপা পড়ে নিহত হয় দুর্জয়। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্জয়ের বাবা রামপুরায় একটি চায়ের দোকান চালান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে দুর্জয় সবার ছোট। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

দুর্জয় নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ওই রাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন এবং এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।