তপ্ত নগরে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উদ্ভাস

ধুলা, দূষণ আর কংক্রিটের নগরীতে কৃষ্ণচূড়া এনেছে লাবণে্যর স্পর্শ। দাবদাহে যানজটে নাকাল নগরবাসীর মনে কিছুটা হলেও প্রশান্তি বয়ে আনে। চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকার ক্রিসেন্ট লেক এলাকায়।  ছবি : সাইফুল ইসলাম
ধুলা, দূষণ আর কংক্রিটের নগরীতে কৃষ্ণচূড়া এনেছে লাবণে্যর স্পর্শ। দাবদাহে যানজটে নাকাল নগরবাসীর মনে কিছুটা হলেও প্রশান্তি বয়ে আনে। চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকার ক্রিসেন্ট লেক এলাকায়। ছবি : সাইফুল ইসলাম

পলাশ, শিমুল আর মাদারের বসন্ত শেষ। তপ্ত গ্রীষ্মে এই ধূসর নগরের ভাঁজে ভাঁজে এখন ডানা মেলেছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। অবিতর্কিতভাবেই বসন্ত ঋতুরাজ। তবে অনেকের চোখে গ্রীষ্ম হচ্ছে পুষ্প উৎসবের ঋতু। যে উৎসবে রাজপথের দুই ধারে শামিল মনোহর জারুল আর স্বর্ণাভ সোনালু। তবে দূরভেদী কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উদ্ভাসের কাছে ফিকে হয়ে গেছে সব রং।

ঢাকার পার্কে–পথে আগুনঝরা এই ফুল দিয়ে নগরবাসীর আহ্লাদের সীমা নেই। সংসদ ভবনের ক্রিসেন্ট লেক–সংলগ্ন সড়কটি এখন কৃষ্ণচূড়ার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। পথের দুধারে ছাতার মতো মেলে থাকা গাছগুলোর ডালপালাজুড়ে অগুনতি ফুলের অবারিত উচ্ছ্বাস। শাখাগুলো দেখাচ্ছে একেকটি সুবিন্যস্ত পুষ্পস্তবকের মতো। এ ছাড়া চন্দ্রিমা উদ্যানসহ গোটা শেরেবাংলা নগরেও এখানে-ওখানে কৃষ্ণচূড়ার আধিক্য চোখে পড়ার মতো। ছুটির দিন কিংবা একটু অবসরে অনেকে ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। তাঁদের ফেসবুকের দেয়াল ভরে উঠছে গাছতলা ছেয়ে থাকা ঝরা ফুল আর কচি সবুজ পাতার ঐশ্বর্যে। বিমানবন্দর সড়ক, সাতমসজিদ সড়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাতিরঝিল, রমনা উদ্যান, মিন্টো রোড কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও কৃষ্ণচূড়ার সংখ্যা ও শোভা কম নয়। এ ছাড়া ঢাকার অনেক এলাকায় ডানে-বাঁয়ে তাকালে কৃষ্ণচূড়া চোখে পড়বেই। আর হলুদ কৃষ্ণচূড়া দেখা যাবে হেয়ার রোড, সংসদ ভবনের পূর্ব পাশের সড়ক ও ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ভেতরে।

দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত নিসর্গ, নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা গ্রন্থে নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা বলছেন, ‘বসন্তে কৃষ্ণচূড়া ফোটে না। আর ফুলের বাজারে কিন্তু কৃষ্ণচূড়া বিকোয় না।’ তবে এই ফুল বাজারে না বিকোলেও বাঙালির হৃদয় আর মননে যে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। দ্বিজেন শর্মা তাঁর আরেক রচনায় জানাচ্ছেন, আফ্রিকার মাদাগাস্কার থেকে উনিশ শতকের প্রথম দিকে এই গাছ প্রথমে ইউরোপ, তারপর উপমহাদেশে আসে। সে হিসেবে বাংলা মুলুকে কৃষ্ণচূড়ার আবির্ভাবের বয়স তিন শ বছরের মতো।

এদিকে শুধু ডালেই নয়, কৃষ্ণচূড়ার আগুনে রং শোভা পায় গাছের নিচেও। ঝরা ফুলের এই সৌন্দর্য দেখার আসল সময় ভোরবেলা। সম্প্রতি এমন এক সকালে দেখা গেল, ক্রিসেন্ট লেকের পাড়ের ফুটপাতে ভোরের মৃদু বাতাসে ঝরে ঝরে পড়ছে লাল ফুলের দল। তার ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছে এক প্রেমিক যুগল। চকিতে মন ভাসিয়ে নেয় মোহাম্মদ রফির উদাস করা সুর, ‘গুলমোহরের ফুল ঝরে যায়, বনে বনে শাখায় শাখায়/ কেন যায় কেন যায়/ বাহারের মন ভেঙে যায়...’। কৃষ্ণচূড়ার আরেক নাম কিন্তু গুলমোহর।