বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
তিন পথিকৃৎ শিল্পীর সৃজনসম্ভার
তিন শিল্পীর িচত্রকর্ম নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পী, শিল্প সমালোচক, সংগ্রাহক ও শিল্পানুরাগীরা।
দেশের আধুনিক চিত্রকলার অন্যতম অগ্রদূত তিন শিল্পী রশীদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীর ও দেবদাস চক্রবর্তীর বিভিন্ন মাধ্যমের দুই শতাধিক শিল্পকর্ম নিয়ে তিন মাস ধরে চলা এক ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী শেষ হতে চলল। ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কের বেঙ্গল আর্ট গ্যালারিতে গত ১৬ মার্চ এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা শিক্ষার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে। এই তিন অগ্রপথিক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রথম পর্যায়ের শিক্ষক। গতকাল রোববার প্রদর্শনীর কাজগুলো নিয়ে প্রকাশিত হলো সুদৃশ্য গ্রন্থ।
‘তিন পথিকৃৎ: রশীদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, দেবদাস চক্রবর্তী: আধুনিকতার উত্তরাধিকার’ নামের এ প্রদর্শনীতে তিন শিল্পীর কাজগুলো ছাড়াও তাঁদের সংক্ষিপ্ত জীবন, কাজের বৈশিষ্ট্যের বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। প্রদর্শনীর নামেই বইটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলো দিয়েছেন সাতটি প্রতিষ্ঠান ও ২১ জন ব্যক্তিগত সংগ্রাহক। এর কিউরেটরের দায়িত্বে ছিলেন শিল্পী ঢালী আল মামুন। সহায়তায় ছিল এইচএসবিসি ব্যাংক। প্রদর্শনীটি ১৮ জুন শেষ হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পী, শিল্প সমালোচক, সংগ্রাহক ও শিল্পানুরাগীরা। প্রদর্শনীর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। শুরুতেই বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী মো. কাওসার ও মোহিনী মজুমদার দেশ রাগে সেতার বাদন করেন। পরে তবলা লহরা পরিবেশন করেন শাকিব খান ও কুমার প্রতিবিম্ব, হারমোনিয়ামে সহায়তা করেন প্রশান্ত ভৌমিক।
প্রদর্শনীর কিউরেটর ঢালী আল মামুন বলেন, এটি একটি গবেষণাধর্মী প্রদর্শনী। যাঁদের শিল্পীকর্ম দিয়ে প্রদর্শনীটি করা সম্ভব হয়েছে, তিনি তাঁদের ধন্যবাদ জানান।
মোড়ক উন্মোচন করে আলোচকেরা স্মৃতিচারণা ও তিন শিল্পীর কাজের বৈশিষ্ট্য, আধুনিক চিত্রকলা এবং গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাট দশকের সাংস্কৃতিক জাগরণে তাঁদের অবদান তুলে ধরেন। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁরা ছিলেন অসাধারণ শিল্পী। শিল্পচর্চা ছাড়াও সমাজ, রাজনীতি বিষয়েও সচেতন ছিলেন। অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, এটি একটি সুপরিকল্পিত গোছানো প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর কাজগুলো নিয়ে বই প্রকাশিত হওয়ায় তাঁদের কাজগুলোর একটি স্থায়ী নিদর্শনও সহজলভ্য হলো।
শিল্পী আবুল মনসুর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তিন শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার দীর্ঘ স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, তাঁদের জীবনযাপনও ছিল নান্দনিক। তাঁদের উপস্থিতি শুধু চিত্রকলার ক্ষেত্রেই নয়, চট্টগ্রামের সামগ্রিক সংস্কৃতিচর্চাতেও বড় রকমের অবদান রেখেছিল। শিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন শিল্পীর কাজের ধরন যেমন আলাদা, তেমনি তাঁদের ব্যক্তিত্বও ছিল প্রবল এবং স্বতন্ত্র। ইউরোপের আধুনিক ধারার সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্যের সমন্বয় করে তাঁরা চিত্রকলাচর্চাকে বেগবান করেছিলেন।’
শিল্পী সৈয়দ আবুল বার্ক্ আলভী বলেন, শিল্পী হিসেবে এই তিনজন যেমন প্রথম সারিতে ছিলেন, তেমনি মানুষ হিসেবেও ছিলেন অত্যন্ত বড়মাপের। তাঁদের নান্দনিক চেতনার সঙ্গে মানবিক গুণের সমন্বয়ই তাঁদের অনন্যতা দিয়েছিল। এ প্রদর্শনীও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
স্মৃতিচারণা করেন শিল্পী নাজলী লায়লা মনসুর। বক্তব্য দেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মাহবুব্ উর রহমান। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক নিসার হোসেন।