তিন হাসপাতাল ঘুরে আদালতে এক বাবা

সকাল পৌনে ৯টার দিকে সিএনজি অটোরিকশায় জন্ম হয় যমজ নবজাতকের। তাদের মাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য একে একে তিন হাসপাতালে যান তাদের বাবা। একসময় মৃত্যু হয় নবজাতকদের। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে যান ওই অসহায় বাবা।

বিষয়টি নজরে আসার পর গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।

ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত আছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নবজাতকদের কেন চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও মুগদায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ব্যাখ্যা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বতঃপ্রণোদিত রুলে নবজাতকদের চিকিৎসায় অবহেলায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। চিকিৎসাসেবা না পেয়ে নবজাতকদের মৃত্যুর পর মরদেহ নিয়ে তাদের বাবা বিচারের প্রত্যাশায় আদালত প্রাঙ্গণে আসেন।’

নবজাতকদের বাবা হাইকোর্ট বিভাগের অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) মো. আবুল কালাম আজাদ। ঘটনা বর্ণনা করে তিনি প্রথম আলোকে জানান, ‘স্ত্রী অসুস্থ বোধ করলে বাসা থেকে সকাল সাড়ে আটটার দিকে মুগদা হাসপাতালের উদ্দেশে বের হই। পথে পৌনে ৯টার দিকে অটোরিকশায় যমজ শিশু জন্ম নেয়। বাচ্চা দুটি পাঁচ মাস ১৭ দিনের মাথায় ভূমিষ্ঠ হয়। এর পরপরই যমজ শিশু ও তাদের মাকে নিয়ে মুগদা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে পৌঁছাই। শিশুদের মাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

শিশুদের বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার কথা জানিয়ে ওই হাসপাতাল থেকে নবজাতকদের শ্যামলীতে অবস্থিত শিশু হাসপাতালে বা অন্যত্র নিয়ে যেতে বলা হয় বলে জানান আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘এরপর অ্যাম্বুলেন্সে করে নবজাতকদের নিয়ে সাড়ে ১১টার দিকে শিশু হাসপাতালে যান। সেখান থেকে বলা হয় এনআইসিইউ (নবজাতক নিবিড় যত্ন ইউনিট) খালি নেই। খালি হলে এখানে রাখতে প্রতি বাচ্চার জন্য দিনে ৫ হাজার টাকা লাগবে। সাধারণ বেডে ভর্তি করলে দিনে প্রতি শিশুর জন্য সাত শ টাকা লাগবে।’

তখন তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেন আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ নবজাতকদের বিএসএমএমইউতে নিয়ে যেতে ও পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তখন শিশু হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নবজাতকদের নিয়ে ওই হাসপাতালের দিকে রওনা হই। দেড়টার দিকে হাসপাতালটিতে এসে পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। পরিচালক মিটিংয়ে বলে জানান তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। পরে পরিচালকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা একজন ডাক্তার দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে নবজাতকদের দেখেন। দুইটার পরে চিকিৎসক জানান, আমার সন্তানেরা বেঁচে নেই।’

পরে পৌনে তিনটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে যান বলে জানান আবুল কালাম আজাদ।