তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ঘেরাও

থানা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে রাজধানীর কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠ শিশু-কিশোরদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

থানা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে রাজধানীর কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠ শিশু-কিশোরদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকার, পরিবেশ আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। অন্যথায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন স্থাপনের প্রতিবাদে আজ বুধবার আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এরপর মাঠের সীমানা ঘেঁষে ১৪টি দেশীয় গাছ রোপণ করা হয়। পাশাপাশি একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।

প্রতিবাদ সমাবেশে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘যারা এখানে খেলে, যারা এ মাঠের প্রকৃত মালিক; তারা এখানে আছে। তারা প্রতিবাদ করছে মাঠ কেন দখল করা হচ্ছে? আমরা সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছি, সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথাবার্তা হচ্ছে।’

পুলিশকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেখানে-সেখানে, যখন খুশি মাঠ নিয়ে নেবেন, পুলিশ যদি এটা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে তাহলে আর মাঠ থাকবে না। আবার বলা হচ্ছে, এখানে যারা খেলত, তারা কলাবাগান মাঠে গিয়ে খেলতে পারবে। কিন্তু কলাবাগান মাঠে তো সব সময় সবাইকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।’

রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘ঢাকা শহরে আমরা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরে যাওয়ার অবস্থায় আছি। সেখানে যদি মাঠ দখল হয়ে যায়, তাহলে এ এলাকার নতুন প্রজন্ম কোথায় যাবে? তারা (পুলিশ) বলেছে, ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে, কিন্তু রাজউক বলছে জানে না। তাহলে কীভাবে এখানে থানা ভবন নির্মাণ হয়? অবিলম্বে এখানে থানা ভবন নির্মাণ বন্ধ হোক।’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান বলেন, ‘আপনারা কয়েক দিন ধরে দেখছেন এখানে দেয়াল তোলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা যখন আন্দোলন শুরু করেছে, নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে, আটক হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আমরা বেশ কয়েকটি সংগঠন কর্মসূচি পালন করছি। আজকে এত কিছুর পরও আমরা লক্ষ করছি এখানে দেয়াল তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা একধরনের অপকৌশল নিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘দেয়াল নির্মাণের মধ্য দিয়ে মাঠ ব্যবহার সীমিত হয়ে যাবে। অনতিবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসুক, এটিকে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার মাঠ হিসেবেই বিবেচনা হোক। কোনো গোষ্ঠীকে যেন না দেওয়া হয়, কোনো থানা বা কোনো স্থাপনা যেন তৈরি না হয়।’

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার বলেন, থানা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে রাজধানীর কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠ শিশু-কিশোরদের ফিরিয়ে দেওয়া না হলে প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঘেরাও করা হবে।

তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সৈয়দা রত্না বলেন, ‘আমি এই মাঠ উন্মুক্ত দেখতে চাই। এই মাঠে এলাকার ছেলেমেয়েরা খেলা করবে। মাঠটি শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করাই আমার একমাত্র চাওয়া। মাঠে শিশু-কিশোরেরা খেলতে পারলে আমার আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।’

‘আমাদের মাঠে আমরাই খেলব’

‘আমাদের মাঠে আমরাই খেলব’—এই শিরোনামে মাঠে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়েছেন আন্দোলনকর্মীরা। এতে লেখা রয়েছে এটি তেঁতুলতলা মাঠ। সেখানে ড্যাপের প্রস্তাবিত নকশায় কলাবাগান এলাকার একটি মানচিত্রও রয়েছে, যাতে তেঁতুলতলা মাঠটি মাঠ হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। সাইনবোর্ডটি প্রচারে শিশু–কিশোর ও নাগরিকবৃন্দ লেখা আছে।

এদিকে স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা মাঠে উপস্থিত হয়ে ‘মাঠ চাই-মাঠ চাই, দাবি মোদের একটাই’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে।