দ্বিধাদ্বন্দ্বে হচ্ছে না কাজ

ডিএনসিসিতে প্রত্যেক কাউন্সিলরকে ৪ লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছিল। তবে টাকা খরচের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা তখন অনেক কাউন্সিলর দিতে পারেননি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন
ফাইল ছবি

জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কাজ করতে প্রত্যেক কাউন্সিলরকে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। গত ১০ জুন বোর্ড সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের এ ঘোষণা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারও করা হয়। তবে বরাদ্দ ঘোষণার দুই মাস পেরিয়ে বর্ষাকাল প্রায় শেষ হলেও অধিকাংশ ওয়ার্ডে ওই টাকায় কোনো কাজ করা হয়নি। তবে কিছু কাউন্সিলর ‘টাকা পাওয়া যাবে’—এই আশায় নালা পরিষ্কার ও অন্যান্য কিছু কাজ করিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।

মেয়রের ঘোষণা করা বরাদ্দের টাকায় কাজ শুরু করতে প্রথম দফায় প্রত্যেক কাউন্সিলরকে ৪ লাখ করে টাকা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল। তবে টাকা কীভাবে খরচ করবেন, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা তখন অনেক কাউন্সিলর দিতে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কর্মপরিকল্পনা না থাকায় নির্দিষ্ট অর্থবছরে টাকা খরচ করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে গত ২৯ জুন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম। চিঠিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) খরচ সম্ভব নয় মনে করলে টাকা করপোরেশনের ব্যাংক হিসাবে ফেরত পাঠাতে হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় সব অঞ্চল থেকেই প্রথম দফার ৪ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

অবশ্য মেয়রের বরাদ্দ করা টাকার বিষয়ে গত জুনে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, কাউন্সিলররা যাতে তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন, সে জন্য কোনো প্রকল্প কিংবা কাজের পরিধি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে না।

জুনে এই বরাদ্দ ঘোষণার পর দুই মাস সময় পেরিয়ে গেছে। শ্রাবণ মাসও শেষ। অর্থাৎ ঋতুচক্র অনুযায়ী বর্ষাকাল শেষ। তবু জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বরাদ্দ করা টাকার কানাকড়িও এখনো ওয়ার্ডবাসীর কল্যাণে কাজে লাগাতে পারেননি কাউন্সিলররা।

ডিএনসিসির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির হোসেন বলেন, ‘এই টাকা পাইওনি, ধরিওনি।’ তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতার সমস্যা আছে, তবে কাজ করিনি। কারণ, টাকাপয়সা দেবে কি দেবে না, এর তো ঠিক নাই। আন্দাজে কিসের কাজ করমু?’ আর ডিএনসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা বলেন, ‘বরাদ্দকৃত টাকায় আমার ওয়ার্ডে এখনো কোনো কাজ করা হয়নি। ওই টাকা সিস্টেমে আটকে আছে।’

জলাবদ্ধতার সমস্যা আছে, তবে কাজ করিনি। কারণ, টাকাপয়সা দেবে কি দেবে না, এর তো ঠিক নাই। আন্দাজে কিসের কাজ করমু?
জাকির হোসেন কাউন্সিলর, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড ডিএনসিসি

এদিকে এলাকার দুর্ভোগ নিরসনে ভূমিকা রাখতে না পেরে মানুষের ‘বকা’ খেতে খেতে ঘরেও থাকতে পারছেন না বলে ফেসবুক লাইভে জানিয়েছেন ডিএনসিসির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিছুর রহমান। গত ৩০ জুলাই নিজের ফেসবুক পেজে উন্নয়নবঞ্চনায় ক্ষোভ থেকে তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘কিসের ট্যাক্স দেব আমরা? কিসের সিটি করপোরেশনের অধিবাসী?’

ডিএনসিসির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বলেন, ‘গত ২০ জুলাই ৪ লাখ টাকার চেক পেয়েছি। এই টাকায় পানি জমে থাকা রাস্তায় বালু-মাটিভর্তি বস্তা ফেলে হাঁটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নালা পরিষ্কার করে জমে থাকা পানির পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে।’ তবে বাকি ৬ লাখ টাকা কবে পাবেন, তা জানেন না বলে তিনি জানান।

এদিকে টাকা পাওয়ার আশায় কাজ করিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘১০ লাখ টাকার কথা বলে কাজ করানো হয়েছে। আর কোনো খবর নাই। এখন বলছে ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করাবে।’

ডিএনসিসি অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন বলেন, চার লাখ টাকা আছে। তবে এই টাকা কোনো ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে দেওয়া হয়নি। যখন পুরো টাকা আসবে, তখন কীভাবে খরচ করা হবে, সেটা ঠিক করার পর দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, টাকা বরাদ্দ দেওয়াই আছে। এখন সেই টাকা খরচের জন্য কাউন্সিলররা যদি কর্মপরিকল্পনা না দিতে পারেন, সেই দায়দায়িত্ব তাঁদেরই নিতে হবে। যেসব কাউন্সিলর পরিকল্পনা দিতে পারেননি, তাঁরাই কোনো কাজ করতে পারেননি।