দ্রুত পোশাকশ্রমিকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার দাবি

টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
তানভীর আহমেদ

কোনো টালবাহানা না করে এখনই পোশাকশ্রমিকদের বার্ষিক ৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পোশাকশ্রমিক নেতারা। তাঁরা বলেছেন, করোনার অজুহাত দিয়ে পোশাকশিল্পের মালিকেরা শ্রমিকদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির বিধান স্থগিত রাখার পাঁয়তারা করছে। সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে হবে। এ নিয়ে ষড়যন্ত্র হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবেন তাঁরা।


আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের শ্রমিকনেতারা সমাবেশ করে এসব কথা বলেন।


সমাবেশে শ্রমিকনেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, পোশাকশিল্পের মালিকেরা করোনার অজুহাত দিয়ে শ্রমিকদের ৫ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি না করার ষড়যন্ত্র করছেন। সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। পোশাকশিল্পের মালিকদের এ আবদার কোনো মামাবাড়ির আবদার নয়। করোনার এ ভয়াবহ সময়ে শ্রমিকেরা কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। অবিলম্বে তাঁদের ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে হবে।’

২০১৩ সালের নিম্নতম মজুরি বোর্ডে প্রথমবারের মতো শ্রমিক-কর্মচারীদের মূল মজুরির ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। পরে ২০১৮ সালের মজুরিকাঠামোতেও তা বহাল রাখা হয়। বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী, সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকের মোট মজুরি আট হাজার টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ৪ হাজার ১০০ টাকা। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পেলে মূল মজুরি ২০৫ টাকা বৃদ্ধি পাবে। আর বাড়িভাড়া বাড়বে ১০২ টাকা ৫০ পয়সা। সাকল্যে শ্রমিকের মজুরি বাড়বে ৩০৭ টাকা ৫০ পয়সা। অন্যান্য গ্রেডেও একেক হারে মজুরি বাড়বে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে গার্মেন্টস শ্রমিক ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন আরও বলেন, পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা যে বেতন পান, সেই টাকায় তাঁদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই শ্রমিকদের সুবিধার্থে ন্যায্যমূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কারখানায় কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস চালুর ব্যবস্থা করতে হবে।

শ্রমিকনেতা তপন সাহা সমাবেশে বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা কারখানায় কাজ করে চলেছেন। উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। এমন সময়ে করোনার অজুহাত তুলে শ্রমিকদের বার্ষিক ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি না করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমরা বলতে চাই, যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে হবে।’

শ্রমিকনেতারা সমাবেশে আরও বলেন, প্রতিনিয়ত পোশাকশিল্পে নারী শ্রমিকেরা যৌন হয়রানিসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যাঁরা নির্যাতনকারী, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন শ্রমিকনেতা নুরে আলম খান, সেলিম হোসেন, মিজানুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, শাহ আলম, পারভীন বেগম প্রমুখ।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের বড় দুই সংগঠনের একটি বিকেএমইএ গত রোববার শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি দিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমানের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ২০১৩ সালের নিম্নতম মজুরি বোর্ডে প্রথমবারের মতো শ্রমিক-কর্মচারীদের মূল মজুরির ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। পরে ২০১৮ সালের মজুরিকাঠামোতেও তা বহাল রাখা হয়। বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী, সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকের মোট মজুরি আট হাজার টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ৪ হাজার ১০০ টাকা। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পেলে মূল মজুরি ২০৫ টাকা বৃদ্ধি পাবে। আর বাড়িভাড়া বাড়বে ১০২ টাকা ৫০ পয়সা। সাকল্যে শ্রমিকের মজুরি বাড়বে ৩০৭ টাকা ৫০ পয়সা। অন্যান্য গ্রেডেও একেক হারে মজুরি বাড়বে।

আরও পড়ুন