‘ধন্যবাদ’ পেয়ে হাসলেন শাহবাগ থানার ওসি

রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ৭ ডিসেম্বর, ঢাকা
ছবি: আসিফ হাওলাদার।

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে একটি সমাবেশ হচ্ছিল। হঠাৎ একদল পুলিশ নিয়ে সেখানে আসেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ। মাইকে দেওয়া বক্তব্যে তখন বলা হয়, ‘পুলিশ আসায় আমাদের জমায়েতটি বড় হয়েছে। এ জন্য শাহবাগ থানার ওসিকে ধন্যবাদ জানাই।’ এতে হেসে ওঠেন ওসি।

ঘটনাটি আজ সোমবার বিকেলের। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদ এবং ভাস্কর্য ভাঙার উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ছিল এই কর্মসূচি। অনুমতি ছাড়া সমাবেশের আয়োজন করায় পুলিশ সমাবেশটি বন্ধ করতে এসেছিল।

পুলিশের চাপের মুখে কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে বলে জানালেন এর অন্যতম আয়োজক বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহবাগে আমাদের কখনোই অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করতে হয়নি। অনুমতি ছাড়া কর্মসূচি করতে হবে—এমন সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক। পুলিশ এসে প্রথমে আমাদের কর্মসূচি বন্ধ করতে বলে। আমাদের অটল অবস্থানের কারণে পরে তাঁরা বলেন যে কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করতে হবে। পুলিশের চাপের মুখে আমরা কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের নির্ধারিত অনেক বক্তা বক্তব্য দিতে পারেননি।’

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া কোনো কর্মসূচি করা যাবে না। আমরা তাদের কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করার জন্য বলেছি।’

কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট জীবনানন্দ জয়ন্ত, আকরামুল হক, শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল প্রমুখ।

সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে রবিন আহসান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা—সবকিছু আজ হুমকির মুখে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে বিপজ্জনক বাংলাদেশে পরিণত করা হয়েছে। হেফাজতের মামুনুল হকদের গ্রেপ্তার না করে নতুন করে চক্রান্ত করা হচ্ছে। আজ রাতের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম সরকারের উদ্দেশে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষ অবাক নয়। দুধ-কলা দিয়ে জামায়াত-হেফাজতকে পুষেছেন, ছোবল খাবেন না, তা তো হয় না!

সমাবেশে বক্তব্য দেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মৌলবাদীদের সঙ্গে আপস করে লাভ নেই। তাঁদের সঙ্গে আঁতাত বন্ধ করুন। এরা বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের দিকে নিয়ে যেতে চায়। ৩০ লাখ শহীদের বাংলাদেশে আমরা থাকব, মৌলবাদীরা নয়।’ এ সময় আকরামুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, মৌলবাদের আস্ফালন প্রত্যাশিত ছিল। পাঠ্যপুস্তককে সাম্প্রদায়িকীকরণ করা থেকে ধাপে ধাপে মৌলবাদকে আশকারা দেওয়া হয়েছে।