ধর্মের নামে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ‘ইসলামের আদর্শ নয়’

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ইসলামে সাম্য ও সম্প্রীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য দেনছবি: প্রথম আলো

একটা সামান্য খবর কিংবা গুজবের কারণে সমাজে ভীষণ ফ্যাসাদ হতে পারে। সত্যাসত্য যাচাই না করে ধর্মের নামে সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে আক্রমণ করা, জেলেপল্লি জ্বালিয়ে দেওয়া, মানুষ হত্যা করা—এটা ইসলামের কোনো বাণী নয়। এটা মহানবীরও আদর্শ নয়। যারা এটি করেছে, তাদের অবশ্যই মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ইসলামে সাম্য ও সম্প্রীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও ‘ডেইলি অবজারভার’ সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘ধর্মকে ব্যবহার করে, কোরআন রক্ষার নামে হত্যা, সংখ্যালঘুর উপাসনালয়ে আক্রমণ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া ইসলামের কোনো বাণী নয়। আমরা কোরআন ভুলে গিয়ে, মহানবীর আদর্শ ভুলে গিয়ে, হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে আছি। ধর্মকে ব্যবহার করে আমরা হানাহানির পথে এগিয়েছি। আমাদের ইসলাম ধর্মে আছে, যদি কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে কোনো অমুসলিম নাগরিক রাষ্ট্রের আইন মেনে বসবাস করেন, তার রক্ষা করার দায়িত্ব সেই রাষ্ট্রের। কোনো ভিন্ন ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের উপাসনালয় থাকে, তাহলে সেটি রক্ষা করার দায়িত্ব সকলের এবং রাষ্ট্রের।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন–বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে, শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার কারণে একজনের বাড়িতে আগুন দিলাম, একজনের সম্পত্তি লুট করলাম, একজনের মেয়েকে ধর্ষণ করলাম, ইসলাম এই বীরত্ব শেখায় না। যারা ইসলামের নামে এই কাণ্ডটি করে, তারা প্রকারান্তরে ইসলামেরই অবমাননা করে। ধর্মকে নিয়ে যারা রাজনীতি করতে চায়, সেই সংকীর্ণ জায়গাতে আমাদের সকল রাজনৈতিক শক্তি এক হোক, সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি।’

একটা সামান্য খবরের কারণে একটা সমাজে ভীষণ ফ্যাসাদ হতে পারে উল্লেখ করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেন, ‘কোরআনের অবমাননা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। কিন্তু কারা করেছেন, সেটি শনাক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের ওপর যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, সেটাও কিন্তু আমরা মেনে নিতে পারি না। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা রক্ষা ইসলামের দাবি। এটা আমাদের মানতে হবে।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নূরুল হুদা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হচ্ছেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলে গেছেন, ‘ধর্ম নিয়ে তোমরা বাড়াবাড়ি কোরো না। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে বহু জাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন।