ধর্ষণের পর সাততলা থেকে ফেলে দেওয়া হয় মেয়েটিকে

আসামি মোহন

৮ নভেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছাদবাগানে পানি দিতে যায় মেয়েটি (১৫)। বাসার নিরাপত্তারক্ষী মোহনও (২০) তখন ছাদে ওঠেন। একা পেয়ে মেয়েটিকে ছাদে ধর্ষণ করেন। মেয়েটির গলায় থাকা ওড়না পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর মেয়েটির লাশ সাততলার ছাদ থেকে ফেলে দেন।

রাজধানীর দক্ষিণখান থানা এলাকার একটি বাসার ছাদে ধর্ষণের পর মেয়েটিকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে মোহন ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মেয়েটি ধর্ষণের কথা সবাইকে বলে দেবে, এই ভয়ে মোহন মেয়েটির গলায় থাকা ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে তাঁকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন
রেজিয়া খাতুন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই)

আসামি মোহন এখন কারাগারে। খুন হওয়া মেয়েটি ওই বাসার গৃহকর্মী ছিল। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। দুই বছর ধরে সে ওই বাসায় কাজ করত।

ধর্ষণের পর হত্যা করার অভিযোগে মোহনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (২) ধারায় মামলা করেন মেয়েটির বাবা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজিয়া খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটি ধর্ষণের কথা সবাইকে বলে দেবে, এই ভয়ে মোহন মেয়েটির গলায় থাকা ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে তাঁকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন।

মেয়েটিকে ধর্ষণ করা এবং সাত তলার ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ধরা পড়েছে পাশের একটি ভবনের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসিটিভি)।

এসআই রেজিয়া খাতুন জানান, যত দ্রুত সম্ভব এই হত্যা মামলায় আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।

মেয়েটির পরিবার ও পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এবং মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, দুই বছর ধরে মেয়েটি দক্ষিণখান এলাকার ওই বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিল। তার বাবা ইটভাটার শ্রমিক। তারা পাঁচ ভাইবোন। খুন হওয়ার দুদিন আগেও মেয়েটি তার বাবার সঙ্গে কথা বলেছিল।

মেয়েটি সেদিন ঘুম থেকে উঠে ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে ছাদে যায় ছাদবাগানে পানি দেওয়ার জন্য। প্রায় প্রতিদিনই মেয়েটি ছাদবাগানে পানি দিত। সে যে বাসায় কাজ করত, সেই বাসার গৃহকর্ত্রীর মেয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সঙ্গে মেয়েটি ঘুমাত।

সেদিন ভোরে ছাদে পানি দেওয়ার জন্য যায় সে। আধঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও মেয়েটি যখন বাসায় ফেরে না, তখন তাঁরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কোথাও তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিল না। ঘণ্টা দুয়েক পর বাসার এক মিস্ত্রী বাসার পাশের কচুরিপানার মধ্যে লাশটি দেখতে পান। সেখানে গিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হন, লাশটি তাঁদের গৃহকর্মীর। তখন পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

লাশ পাওয়ার খবর পেয়ে সেখানে আসেন দক্ষিণখান থানার এসআই রেজিয়া খাতুন।

মেয়েটির খুন হওয়া সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা রেজিয়া খাতুন বলেন, মোহনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে শুরুতে তিনি সবকিছু অস্বীকার করছিলেন। পরে তাঁরা ওই ভবনের পাশের আরেকটি বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পান। সেই ভিডিওতে মেয়েটিকে ধর্ষণ, তারপর ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার সব দৃশ্য ধরা পড়ে।

সেদিন মোহনের পরনে ছিল কালো গেঞ্জি। সেই গেঞ্জি জব্দ করেছে পুলিশ।

খুন করার সাত মাস আগে আসামি মোহন ওই বাসায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ নেন। তাঁর বাবা নজরুল ইসলাম ওই বাসায় দীর্ঘদিন নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেছেন। বাসার গৃহকর্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কল্পনাও করতে পারিনি, আমার বাসার কাজের মেয়েকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে।’

ওই মেয়ের মৃত্যুর পর তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মেয়েটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমার পাঁচ সন্তান। অনেক কষ্ট করে ওদের মানুষ করেছিলাম। কিন্তু কেমনি কী হয়ে গেল? আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলল। আমি মোহনের ফাঁসি চাই।’