নিজের সঙ্গে নিজে আপস করেছি: দুদকের বিদায়ী চেয়ারম্যান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ
ফাইল ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, তিনি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির স্বার্থে কখনো কখনো নিজের সঙ্গে নিজে আপস করেছেন। তবে দায়িত্বে থাকতে তাঁর ওপর কেউ চাপ প্রয়োগ করার সুযোগ পাননি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে আজ সোমবার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বিদায়ী সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে ইকবাল মাহমুদ এ কথা বলেন।

দায়িত্বে থাকতে মন্ত্রী-এমপি কারও কাছ থেকে চাপ ছিল কি না, জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এ কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের ওপর কেউ চাপ প্রয়োগ করার সুযোগ পাননি। যা করেছি, আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ করেই করেছি। তবে এ কথা স্বীকার করতেই হয়, যখন কোনো বিষয়ে মনে হয়েছে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে, তখন নিজের সঙ্গে নিজে আপস করেছি। সে ক্ষেত্রে কখনো কখনো সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। কারণ, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির বিষয়টি আমার কাছে সবার আগে।’

ইকবাল মাহমুদ ২০১৬ সালের ১০ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। প্রায় পাঁচ বছর তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

বেসিক ব্যাংকের তদন্ত কেন শেষ করা যায়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘কমিশনের কাছে একটি প্রতিবেদন এসেছিল। সেটি আমরা ফেরত দিয়েছি। কারণ, আমরা আদালতে কোনো ত্রুটিপূর্ণ প্রতিবেদন দিতে চাই না। তদন্তকারী কর্মকর্তারা স্বাধীন। তাঁদের বলেছি, এই অর্থ কোথায় গেছে, কীভাবে গেছে, তা বের করতে। এর জন্য তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে।’

দুদকের বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেন, বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ৬৫টি মামলা হয়েছে, আরও হবে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন যথেষ্ট ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান। এটি ‘নখদন্তহীন বাঘ’—এগুলো অতীত বিষয়। তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন একটি বার্তা দিতে সফল হয়েছে, তা হলো—কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ক্ষমতা বা অর্থের প্রভাবে দুদককে প্রভাবিত করা যায়নি। অনেককেই আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

দায়িত্বপালনে তৃপ্তি বা অতৃপ্তির বিষয়ের জিজ্ঞেস করলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘অতৃপ্তি হচ্ছে জন–আকাঙ্ক্ষা অনুসারে হয়তো দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সমাজের সর্বস্তরে এই বার্তা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এটাই আমার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘বিগত পাঁচ বছরে দুদকের যে আইনি ম্যান্ডেট রয়েছে, তা কার্যকর করার জন্য সব সময় সচেষ্ট ছিলাম। গণমাধ্যমের অনেক রিপোর্ট নিয়ে কমিশন অনুসন্ধান বা তদন্ত করেছে। গণমাধ্যমে আমাদের অনেক সমালোচনা হয়েছে, আবার প্রশংসাও হয়েছে। আমরা গণমাধ্যমের অনেক সুপারিশ গ্রহণ করেছি।

সমালোচনাকে সব সময়ই সাধুবাদ জানিয়েছি। আজ এ বিদায়বেলায়ও বলব, গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমেই পরিশুদ্ধ হওয়া যায়।’

দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিধি অনুসারে দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমনে দুদকের বিদ্যমান মেকানিজম সংস্কার করা যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটির পরিধি বাড়ানো যেতে পারে। প্রথিতযশা গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কিংবা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অথবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জন্য এ–জাতীয় কর্মপ্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত।’

দুদকের এই বিদায়ী চেয়ারম্যান মনে করেন, দুর্নীতি নির্মূলে সামাজিক আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।