নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি হয়েছে মাত্র ১.৩৩ শতাংশ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) পশু কোরবানি হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯০টি (আনুমানিক)। কিন্তু করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ১৪৪টি।

প্রতিটি ওয়ার্ডে পশু কোরবানির জন্য একাধিক জায়গা নির্ধারণ করা ছিল আগে থেকেই। নির্ধারিত স্থানে টানানো হয়েছিল প্যান্ডেল। অপেক্ষাকারীদের জন্য প্যান্ডেলের নিচে বসার ব্যবস্থাও ছিল। ছিল পশু জবাই কাজের পানি ও কোরবানিদাতাদের আরামের জন্য পাখা। এমনকি মানুষকে আগ্রহী করতে প্যান্ডেলে সেমাই ও চকলেটের ব্যবস্থাও করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু করপোরেশনের সব চেষ্টা এক প্রকার ব্যর্থ করে দিয়ে এ বছরও বেশির ভাগ মানুষ কোরবানি দিয়েছেন হয় বাসার সামনের রাস্তায়, নয়তো বাসার গ্যারেজে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) হিসাব বলছে, এই ঈদের প্রথম দিনে ডিএনসিসিতে পশু কোরবানি হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯০টি (আনুমানিক)। কিন্তু করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ১৪৪টি। অর্থাৎ মোট কোরবানি হওয়া পশুর মাত্র ১ দশমিক ৩৩ ভাগ কোরবানি হয় নির্ধারিত স্থানে। ঢাকা উত্তর সিটির মোট ২৭০টি জায়গায় প্যান্ডেল করে পশু কোরবানির জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

আজ বৃহস্পতিবার বর্জ্য পরিষ্কার ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসে এ নিয়ে দুঃখও প্রকাশ করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। মেয়র বলেন, দেশ উন্নত হচ্ছে, পদ্মা সেতু, এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে, কিন্তু কোরবানি দেওয়ার ধারণা ও পদ্ধতি এখনো মান্ধাতার আমলেরই রয়ে গেছে।

মেয়র বলেন, মোহাম্মদপুরের পশু জবাইখানায় ২৫টি ফ্রিজার ভ্যান ছিল, সেখানে কোরবানির সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও রাখা ছিল। সেখানে এক হাজার গরু কোরবানির মতো প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু ওই জায়গায় ১০০টিও গরু আসেনি। এটি ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনেককে ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করেছি, জবাইখানায় কেন এলেন না? তাঁরা মাংস ঠিকমতো, মাপমতো পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। মাংস যদি বদলে যায়, এ নিয়েও অনেকের সংশয় ছিল। কিন্তু যাঁরা এসেছেন, তাঁরা বলতে পারবেন, তাঁরা করপোরেশনের কাছ থেকে কেমন সেবা পেয়েছেন।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম
ফাইল ছবি

মেয়র আরও বলেন, আগামী কোরবানিতে করপোরেশন যেখানে স্থান নির্ধারণ করবে, সেই নির্দিষ্ট জায়গাতেই কোরবানি দিতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোথাও কোরবানি দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ, বাড়িমালিক, সোসাইটি ও কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি এবং সমাজের মুরব্বিদের—সবার সাহায্য চাই। কারণ, বাচ্চারা যখন পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখে, তখন তারা বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারে না।

রাস্তায় কিংবা বাসার গ্যারেজে যেভাবে কসাইদের দিয়ে পশু কোরবানি ও মাংস কাটার কাজ করানো হয়, নির্ধারিত স্থানেও তা করা যাবে জানিয়ে মেয়র বলেন, করপোরেশনের নির্ধারিত জায়গাতেও নিজেদের ঠিক করা কসাই আনা যাবে। নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিলে বর্জ্য পরিষ্কার করার কাজটি সহজে ও দ্রুত সময়ের মধ্যে করা যাবে। যত্রতত্র কোরবানি দেওয়ার ফলে সেই বর্জ্য অপসারণে করপোরেশনের যত টাকা ব্যয় হয়, পরিকল্পনা মোতাবেক নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করলে এর চেয়ে অনেক কম ব্যয়ে কাজটি করা যাবে।

অনেককে ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করেছি, জবাইখানায় কেন এলেন না? তাঁরা মাংস ঠিকমতো, মাপমতো পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। মাংস যদি বদলে যায়, এ নিয়েও অনেকের সংশয় ছিল। কিন্তু যাঁরা এসেছেন, তাঁরা বলতে পারবেন, তাঁরা করপোরেশনের কাছ থেকে কেমন সেবা পেয়েছেন।
মেয়র আতিকুল ইসলাম

ডিএনসিসিতে আজকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ হাজার ৯০৮ ট্রিপের মাধ্যমে ১১ হাজার ৯৩৫ টন কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণে ৪৯৩টি বিভিন্ন ধরনের ভারী যান-যন্ত্রপাতি কাজ করছে। সিটি করপোরেশনের ও আউটসোর্সিংয়ের মোট ১১ হাজার ৫০৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিরলসভাবে এ কাজ করছেন।