‘ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি’

ছাত্রলীগের উদ্যোগে শীতবস্ত্র ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠান
ছবি : প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের নেতৃত্বে হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে ছাত্র সমাবেশ চলছিল। পাশেই স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ছাত্রলীগের উদ্যোগে শীতবস্ত্র ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠান হচ্ছিল। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান নুরুলদের দেখিয়ে বললেন, ‘এসব নামসর্বস্ব সংগঠনকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছাত্রলীগ রাখে৷ আমরা কাজে বিশ্বাসী, কথায় নয়৷’

আজকে ছাত্রলীগের সুনাম দেখে একটি পক্ষের গায়ে জ্বালা ধরে৷ অনেকেই নামসর্বস্ব সংগঠন নিয়ে ডানে-বামে ছাত্র সমাবেশ করেন, ২০ জনের মতো কর্মীও যাঁদের নেই৷ সেই সংগঠনের নাম বিক্রি করে তাঁরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চান৷
আল নাহিয়ান খান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি

ঘটনাটি আজ বুধবার বিকেলের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিল ছাত্র অধিকার পরিষদ। আজ ১৫তম দিনে কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করতে সমাবেশ ডাকে সংগঠনটি। আর ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে দুস্থ মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠান করে ছাত্রলীগ।

নুরুলদের দিকে নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ‘দেখুন, আমাদের ডান পাশে যাদের ছাত্র সমাবেশ হচ্ছে, সেখানে ২০ জন ছাত্রও নেই৷ কী দেউলিয়াত্ব ওই সংগঠনের! তাঁদের নেতা-কর্মীরা ধর্ষণের মতো কর্মকাণ্ড করেন। জনপ্রিয়তা পেতে হলে জনগণ ও শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে হয়, কিন্তু তাঁরা কাজ করেন টাকার জন্য৷ মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের নিয়ে তাঁরা কটূক্তি করেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অবমাননাকারীদের সহায়তা করার চেষ্টা করে এই নামসর্বস্ব সংগঠন। সবাইকে হুঁশিয়ারি করে বলতে চাই, ছাত্রলীগ কিন্তু মাঠে আছে৷ এসব নামসর্বস্ব সংগঠনকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছাত্রলীগ রাখে৷ আমরা কাজে বিশ্বাসী, কথায় নয়৷’

সহমত ভাই রাজনীতি, জিন্দাবাদ আর জ্বি ভাই রাজনীতি, ভেড়ার পালের মতো নেতার পেছনে ছোটা রাজনীতি—ছাত্ররাজনীতির নামে এসব অপরাজনীতি দিয়ে কোনো পরিবর্তন আসবে না
নুরুল হক, সাবেক ভিপি, ডাকসু

ছাত্রলীগের সভাপতি আরও বলেন, ‘আজকে ছাত্রলীগের সুনাম দেখে একটি পক্ষের গায়ে জ্বালা ধরে৷ অনেকেই নামসর্বস্ব সংগঠন নিয়ে ডানে-বামে ছাত্র সমাবেশ করেন, ২০ জনের মতো কর্মীও যাঁদের নেই৷ সেই সংগঠনের নাম বিক্রি করে তাঁরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চান৷ তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, জনপ্রিয় সংগঠন ছাত্রলীগ আপনাদের নিয়ে ভাবে না৷ আপনাদের মতো পুঁচকে, যাঁদের ২০টি নেতা-কর্মীও নেই, যাঁদের জামায়াত-শিবির ও বিএনপির মদদপুষ্ট ছাত্রদলের সঙ্গে আঁতাত করে চলতে হয়, তাঁদের বাংলাদেশের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা বয়কট করেছে৷’

রাজু ভাস্কর্যের ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য দেন নুরুল হক
ছবি : প্রথম আলো

এর কিছুক্ষণ পর রাজু ভাস্কর্যের ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য দেন নুরুল হক৷ বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সহমত ভাই রাজনীতি, জিন্দাবাদ আর জ্বি ভাই রাজনীতি, ভেড়ার পালের মতো নেতার পেছনে ছোটা রাজনীতি—ছাত্ররাজনীতির নামে এসব অপরাজনীতি দিয়ে কোনো পরিবর্তন আসবে না৷’ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নুরুল বলেন, 'শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে, শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়াতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নোংরা রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ বন্ধ করতে হবে৷’

এদিকে ছাত্রলীগের দুস্থ মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র ও সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান৷ কর্মসূচির উদ্বোধন করে তিনি বলেন, ‘মানবিক, বিনয়ী, উদার ও ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বিব্রত করব না—এই প্রতিজ্ঞা করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে৷’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী৷ অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার৷