নেতারা ভিন্ন অবস্থান নিলে তাঁদের অবস্থানও পাল্টে যায়: অধ্যাপক তানজীম

মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান

টিএসসি ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। তিনি বলেছেন, সব সরকারের আমলেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে থাকা শিক্ষকদের নিজের প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বোঝা ও তা প্রকাশের সাহস থাকে না৷ তাঁরা যে রাজনৈতিক দলের অনুসারী, যেকোনো বিষয়ে সেই দলের নেতাদের অবস্থানের সঙ্গে তাঁদের অবস্থানও পাল্টে যায়।

অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান সাময়িকী ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক৷ শিক্ষকতার বাইরে তিনি রাজনৈতিক অর্থনীতি, উন্নয়ন রাজনীতি ও রাজনৈতিক প্রতিবেশ নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি করেন।

টিএসসির রূপবদলের পরিকল্পনা নিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে তানজীমউদ্দিন বলেন, ‘টিএসসি যদি ভাঙার সিদ্ধান্ত নিতে হয়, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, অন্য কারও নয়৷ ষাটের দশকে নির্মিত টিএসসির নকশা করেছিলেন প্রখ্যাত এক গ্রিক স্থপতি৷ ফলে টিএসসির স্থাপত্যশৈলী একটি শৈল্পিক ধারা ধারণ করে৷ কোনো কিছুর ঐতিহাসিক মূল্য তো আর অন্য কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যায় না! টিএসসি অবশ্যই হেরিটেজ (ঐতিহ্য)৷ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন টিএসসিতে আমাদের আনাগোনা ছিল৷ তাই টিএসসি আমাদের অস্তিত্বের অংশ বটে, আবার একই সঙ্গে ইতিহাসকেও ধারণ করছে৷ যেসব স্থাপনা ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেগুলোকে টিকিয়ে রাখাটা অনেক বেশি দরকার৷ টিএসসির এখনকার নকশাটা বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধারণক্ষমতার উপযোগী কি না, তা গবেষণার বিষয়৷ বহুতল ভবন করে ক্যাম্পাসে কংক্রিটের জঞ্জাল তৈরি করা হচ্ছে৷ ক্যাম্পাসে মেট্রোরেলের মাধ্যমে যে ধ্বংসের সূচনা হয়েছে, টিএসসি ভাঙা তারই অংশ৷’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে অধ্যাপক তানজীম আরও বলেন, ‘নব্বইয়ের দশক থেকে সব সরকারের আমলেই আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে থাকা শিক্ষকদের নিজের প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বোঝা ও তা প্রকাশের সাহস থাকে না৷ প্রশাসনে গেলে তাঁরা স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেন৷ তাঁরা যে রাজনৈতিক দলের অনুসারী, সেই দলের নেতারা ভিন্ন অবস্থান নিলে তাঁরাও অবস্থান পাল্টে ফেলেন৷ নিজের প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ না বোঝাটা খুবই দুঃখজনক৷ শিক্ষক ও গবেষকের কাজ প্রশ্ন করা৷ তা না করে নির্দিষ্ট বিশ্বাস থেকে কোনো কিছুকে প্রশ্নহীনভাবে স্বাগত জানানোর ফলে সেই জায়গা সংকটে পড়ে৷’

অধ্যাপক তানজীমসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেউ কেউ টিএসসির দৃষ্টিনন্দন ভবনটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও একে নতুন করে গড়ার লক্ষ্যে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর। নকশা প্রস্তুতপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গণপূর্ত অধিদপ্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে চাহিদাপত্রও নিয়েছে৷ এখন নকশার কাজ চলছে।