পছন্দের তালিকায় সুতির পাঞ্জাবি

পরিবারের জন্য পছন্দের পাঞ্জাবি খুঁজছেন দুই ক্রেতা। গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলের দেশী দশের আউটলেটে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

নাহিদ আলম ও সাকিনা হাসানের বিয়ে হয়েছে জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখ। বিয়ের পর প্রথম ঈদ। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ঈদবাজারে ঢুকতে মনে ভয় ছিল। তারপরও শ্বশুরবাড়ির জন্য কেনাকাটা তো করতেই হবে। নাহিদ আলম রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলের সাদা-কালো থেকে একটি সাদা পাঞ্জাবি কিনলেন তাঁর শ্বশুরের জন্য। শুধু পাঞ্জাবি নয়, বাড্ডা থেকে আসা এই দম্পতির কেনাকাটার তালিকাটা ছিল আরও বড়। তাই তাড়াও ছিল।

নারায়ণগঞ্জের এক তরুণ সেইলরে পাঞ্জাবি খুঁজছিলেন। তাঁর হাতের মুঠোফোনে আগে থেকেই পছন্দ করে রাখা পাঞ্জাবির ছবির সঙ্গে দোকানের পাঞ্জাবিটি মিলিয়ে দেখছিলেন। আর ইয়োলো আউটলেটে এক তরুণ তাঁর হাতের ল্যাপটপ বের করে সেখানে রাখা ছবি দেখাচ্ছিলেন। আউটলেটে দায়িত্বরত বিক্রেতা চেষ্টা করছিলেন এই ক্রেতার চাহিদামতো পাঞ্জাবিটি দিতে। গতকাল সোমবার ঈদবাজারে পাঞ্জাবির ক্রেতা-বিক্রেতাদের এই ছিল অবস্থা।

করোনার প্রকোপে দোকানিদের মুখে কিছুটা হতাশার সুর। ঈদবাজারে তুলনামূলকভাবে ক্রেতাও কম। তবে যে ক্রেতারা কিনতে এসেছেন, তাঁরা যাচাই–বাছাই করেই কিনছেন। মাপ মিললে দাম মিলছে না, মাপ-দাম সব মিললে রংটা তখন আর ঠিক পছন্দ হচ্ছে না।

এবার পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় আছে সুতির পাঞ্জাবি। বিক্রেতাদের ভাষায় সেমি লং পাঞ্জাবি বেশি চলছে। জয় সিল্ক, অ্যান্ডি, জর্জেটসহ বিভিন্ন কাপড়ের পাঞ্জাবি বেশি কিনছেন শৌখিন ক্রেতারা।

এক ক্রেতা মোবাইলে পছন্দের পাঞ্জাবির ছবির সঙ্গে দোকানের পাঞ্জাবি মিলিয়ে দেখছেন। বসুন্ধরা শপিং মল থেকে গতকাল সোমবার ছবিটি তোলা
ছবি: মানসুরা হোসাইন

অঞ্জন’স–এর বসুন্ধরা শাখার ইনচার্জ গৌতম মজুমদার জানালেন, তরুণদের পছন্দ সেমি লং আর বয়স্কদের পছন্দ কলিদার পাঞ্জাবি। ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকার পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। তবে কম দামের ক্রেতা বেশি। এক হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বিভিন্ন দোকান এবং বসুন্ধরা শপিং মল ঘুরে দেখা গেল, ঈদবাজারের ক্রেতাদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। ঈদ হলেও পাঞ্জাবিতে জমকালো কাজ কম দেখা গেল।

সারা লাইফ স্টাইলের পরিচালক শরিফুন রেবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনায় আমরা বিক্রি নিয়ে একটু ভয়েই ছিলাম। তবে যেদিন থেকে সরকার মার্কেট খুলে দিয়েছে, সেদিন থেকে বিক্রি বেশ ভালো। বিশেষ করে সারার সব পণ্যের মধ্যে পাঞ্জাবিটা সব সময়ই বেশি বিক্রি হয়। কাবলি সেট, স্লিম ফিট পাঞ্জাবি বেশি কিনছেন ক্রেতারা।’

ঈদের মাত্র কয়েক দিন বাকি, এ অবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ মিলত না। তবে করোনার কারণে এবারের চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। বসুন্ধরা শপিং মলের দেশী দশের আউটলেটে ঈদের বাজারের আমেজ কম। নিপুণ আউটলেটে স্থপতি সোয়েব উল আলম স্ত্রী এবং তিন মেয়েকে নিয়ে কেনাকাটা করছিলেন। জানালেন, ছোট দুই মেয়ে ছাড়া বড় মেয়েসহ তাঁরা তিনজনই করোনায় ভুগেছেন। ঈদবাজারের জন্য এক দিনই বরাদ্দ রেখেছেন। জানালেন, সব কেনাকাটা শেষে পাঞ্জাবিও কিনবেন। নিপুণে স্ক্রিন প্রিন্টের পাঞ্জাবির পাশাপাশি ব্লক এবং হাতের কাজের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে।

ঈদবাজারে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মুখে মাস্কের ব্যবহার বেড়েছে। মার্কেটে ঢোকার সময় হাতে ও শরীরে স্প্রে করাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও বেশ মানতে দেখা গেল।