পরিচয় দিতেন আন্তর্জাতিক এনজিওর প্রধান নির্বাহী, যাতায়াত করতেন হেলিকপ্টারে

মো. রুবেল আহম্মেদ
ছবি: সংগৃহীত

কানাডিয়ান কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন নামের একটি দাতা সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলে নিজেকে পরিচয় দিতেন মো. রুবেল আহম্মেদ (৩৬)।

সেবামূলক প্রকল্পের কথা বলে মানুষের আস্থা অর্জনে বেশ কিছু ঘর তোলেন, স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য জমি বায়না করেন। এরপর একেকটি প্রকল্প একেকজনকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কাউকে কাউকে আবার প্রকল্প ও স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রলোভন দেখান। এভাবে নানা অজুহাতে ৪৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি আত্মগোপনে যান।

পরে গতকাল রোববার অষ্টম শ্রেণি পাস এই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ। রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার বিষয়টি জানায় পুলিশ।

৬ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার খোকসা থানার বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার রুবেলের নামে মামলা করেন। তবে মামলার আগেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি ভারতে পালিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করছিলেন। কেউ যেন তাঁকে চিনতে না পারে, সে জন্য পাসপোর্টে বাবার নামের জায়গায় লিখেছিলেন খালুর নাম।

ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, মো. রুবেল আহমেদ হেলিকপ্টারে চড়ে কুষ্টিয়ার খোকসায় গিয়েছিলেন মাস কয়েক আগে। তিনি নিজেকে কানাডিয়ান কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।

এলাকার জনপ্রতিনিধিদের তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের তালিকা তিনি তৈরি করবেন। তাঁদের আবাসন, স্কুল নির্মাণ, নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, কৃষকদের মধ্যে নলকূপ বণ্টন, দুস্থদের চিকিৎসা সাহায্যসহ বিভিন্ন সেবামূলক আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করতে চান তিনি। তিনি ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকার প্রকল্পও প্রস্তুত করেন। মানুষের আস্থা অর্জনে বেশ কিছু ঘর তোলেন, স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য জমি বায়না করেন। এরপর একেকটি প্রকল্প একেকজনকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন রুবেল। কাউকে কাউকে আবার প্রকল্প ও স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রলোভন দেখান। রুবেল তাঁদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিলের টাকা ছাড়ের জন্য আড়াই শতাংশ হিসেবে তাঁকে কর দিতে হবে। এভাবে নানা অজুহাতে ৪৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি আত্মগোপনে যান।

মামলা তদন্তের সময় গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযুক্তের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ। গতকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে বিমানবন্দর থানার উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের ইকোনমিক ক্রাইম অ্যান্ড হিউম্যান ট্রাফিকিং টিম।

যাতায়াতের জন্য রুবেল হেলিকপ্টার ব্যবহার করতেন
ছবি: সংগৃহীত

এ সময় মো. রুবেল আহম্মেদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, একাধিক মুঠোফোন, সিম কার্ড, ভ্যাট প্রদানের নির্দেশপত্র, কাজ দেওয়ার অনুমতিপত্র, অনলাইনে কর পরিশোধ পদ্ধতিসংক্রান্ত ভুয়া কাগজপত্র, বিভিন্ন লোকের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি লাগানো অনুদানপ্রাপ্তির ফাঁকা আবেদন ফরম, বিভিন্ন মানুষের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি লাগানো চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন, ঘর দেওয়ার জন্য দুস্থদের নামের তালিকা, সিসিআইসি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটির তালিকা, বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র কেনার অনুমোদনপত্র ও বিল ভাউচার, কানাডিয়ান কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশনের হিসাব বিবরণীসহ বিভিন্ন কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করাই তাঁর পেশা। মানুষের আস্থা আদায়ের জন্য যাতায়াতের ক্ষেত্রে তিনি হেলিকপ্টার ব্যবহার করতেন। কুষ্টিয়া, মাগুরা, খাগড়াছড়িসহ কয়েকটি জেলায় তিনি প্রতারণার জাল বিছিয়েছিলেন। পুলিশ জানতে পেরেছে কানাডিয়ান কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন নামে একটি কানাডাভিত্তিক দাতা সংস্থা রয়েছে। তবে কানাডা দূতাবাসে যোগাযোগের পর পুলিশ জানতে পারে মো. রুবেল আহম্মেদের সঙ্গে ওই সংস্থার কোনো যোগাযোগ নেই। সংস্থাটির এ দেশে কোনো শাখাও নেই।