পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণায় বাড়ল সবজির দাম

আড়তমালিক ও সবজি বিক্রেতারা বলছেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ট্রাকমালিকেরাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ফাইল ছবি

পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধের প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে গতকাল শুক্রবার প্রায় সব ধরনের সবজি বিক্রি হয়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে।

যদিও পণ্য পরিবহনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়েছে গতকাল সকাল থেকে। আর বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে সবজিসহ অন্যান্য কাঁচামাল বহনকারী পর্যাপ্ত যানবাহন এসেছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

আড়তমালিক ও সবজি বিক্রেতারা বলছেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ট্রাকমালিকেরাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি যানবাহন চলাচল বন্ধের ঘোষণায় বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক কম এসেছে। এ দুই কারণে সবজির দাম বেড়েছে।

গতকাল রাজধানীর রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুরের টাউন হল ও কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঢ্যাঁড়স, করলা, পটোল ও বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক দিন আগে বৃহস্পতিবার সবজিগুলো প্রতি কেজির দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এ ছাড়া লম্বা ও গোল (সবুজ) বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। গোল বেগুনের দাম আরও বেশি। বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ টাকায়। আগে যে কচুমুখীর দাম ছিল কেজি ৩৫-৪০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

টাউন হল কাঁচাবাজারে গতকাল সকালে মাঝারি আকারের লাউ প্রতিটি ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। বিকেলে এই আকারের লাউয়ের দাম ৬০ টাকা হাঁকেন বিক্রেতা সুজন মিয়া। তিনি বলেন, রাতে পণ্য আসবে কি আসবে না, এর নিশ্চয়তা নেই। তাই সবকিছুর দাম একটু বেড়ে গেছে। তাঁর দোকানে মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। ছোট আকারে কেটে রাখা একেক টুকরা মিষ্টিকুমড়া তিনি ৩০ টাকায় বিক্রি করেন।

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. জাকির হোসেন গতকাল বিকেলে মুলা প্রতি কেজি ৫০, কাঁচামরিচ ১২০ ও শিম ১২০ টাকায় বিক্রি করেন। দাম আগের মতোই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বাজারে এখনো কোনো সবজির দাম বাড়েনি। কারণ, বৃহস্পতিবার রাতে বাজারে সবজিবাহী ট্রাক এসেছে। তবে কোনো কোনো বিক্রেতা দাম কিছুটা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।

পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান একাধিক ব্যবসায়ী। তেজগাঁওয়ে ডিমের আড়ত নেয়ামতপুর ট্রেডার্সের বিক্রেতা জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কিশোরগঞ্জ থেকে তিন টনের একটি ট্রাকের ভাড়া ছিল ৫ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই ট্রাকের ভাড়া ৬ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে।

মোহাম্মদপুর টাউন হলের পাইকারি ডিম বিক্রেতা মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ১০০ ডিম ৮২০ টাকায় কিনেছিলাম। আজকে (গতকাল) কিনেছি সাড়ে ৮৫০ টাকায়। পাইকারিতেই আমি এক ডজন ডিম ১১৫ টাকায় বিক্রি করছি।’

ফার্মের ডিমের দাম বাড়লেও ব্রয়লার মুরগি ও সোনালিকা (কক) মুরগির দাম অপরিবর্তিত আছে। গতকাল টাউন হল ও কারওয়ান কাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৬৫ টাকা ও সোনালিকা মুরগি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। টাউন হলের নিউ ফরেন চিকেন হাউসের মালিক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মুরগি আনা গেছে। আজকে (গতকাল) রাতে আনা যাবে কি না, এখনো নিশ্চিত নয়। আনা না গেলে দাম বাড়বেই।

বেসরকারি চাকরিজীবী ইকবাল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এমনিতেই বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। এবার সবজির দামও হঠাৎ বেড়ে গেল। এই দুঃসময়ে সংসার চালানোর চাপ আরও বাড়ল।