পাতালরেল প্রকল্প ‘অবাস্তব ও উচ্চাভিলাষী’: বিআইপি

বিআইপি

সরকার ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় পাতালরেল (সাবওয়ে) নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটিকে ‘অবাস্তব ও উচ্চাভিলাষী’ বলে মনে করছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স। নগরবিদদের সংগঠনটি বলছে, নির্মাণ ও তদারকি ব্যয় অত্যন্ত বেশি হওয়ায় পাতালরেল বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিদ্যমান নগর-পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনাতেও পাতালরেলের বিষয় কিছু বলা হয়নি।  

সমসাময়িক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান।  

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় পাতালরেল (সাবওয়ে) নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই ও রুটের প্রাথমিক নকশা প্রণয়নে ৩১৮ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু বিভাগ। প্রতি ৩০ কিলোমিটার সাবওয়ে নির্মাণে আট বিলিয়ন ডলারের মতো ব্যয় হতে পারে, যা বাংলাদেশি টাকায় ৬৮ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০০৫ সালে প্রণীত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) এবং ২০১৬ সালে সংশোধিত এসটিপিতে (আরএসটিপি) পাঁচটি মেট্রোরেল ও দুটি বিআরটি নির্মাণের সুপারিশ রয়েছে। আগের দুই মহাপরিকল্পনাতেই ঢাকার মতো অপরিকল্পিত শহর পাতালরেল নেটওয়ার্কের উপযুক্ত নয় বলে মতামত এসেছে। পাতালরেলের মতো মেগা প্রকল্পের কোনো দিকনির্দেশনা পরিবহন পরিকল্পনায় এবং ঢাকা শহরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় নেই।

ঢাকা শহরের যোগাযোগব্যবস্থা–সংক্রান্ত যেকোনো পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা সাবওয়ে প্রকল্পের বিষয়ে এই দুটি সংস্থার মতামত প্রাধান্য পায়নি বলে জানিয়েছে বিআইপি।

বিআইপি বলছে, পরিবহন পরিকল্পনায় বাসভিত্তিক গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে নগর যোগাযোগব্যবস্থা প্রণয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) বাস্তবায়ন তুলনামূলক সাশ্রয়ী। অথচ বিআরটিকে প্রাধান্য না দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলের মতো অতি ব্যয়বহুল প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা শহরে কয়েক হাজার আধুনিক বাস চালু করার মতো সহজ সমাধান গত ১৫ বছরে বাস্তবায়ন করা হয়নি।

মেট্রোরেল ও সাবওয়ে সমজাতীয় যোগাযোগ অবকাঠামো। সাবওয়ে সাধারণত মাটির নিচে গড়ে তোলা হয়। নির্মাণে ব্যবহার করা হয় অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি। স্বভাবতই এর নির্মাণ ব্যয়ও হয় অনেক বেশি। বিআইপি সংবাদ সম্মেলনে জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে সিঙ্গাপুরে পাতালপথ নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয়েছে ৪৯৩ মিলিয়ন ডলার। আর হংকংয়ে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয়েছে ৫৮৬ মিলিয়ন ডলার। বৈশ্বিক বিবেচনায় সাবওয়ে নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং প্রকল্পের শুরুতে প্রাক্কলিত ব্যয় বাস্তবায়নের সময় অনেক বেড়ে যেতে পারে। ফলে অনেক দেশ ও শহর এ ধরনের ব্যয়বহুল প্রকল্প থেকে সরে আসছে।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় সাবওয়ে নির্মাণ নিয়ে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরে বিআইপি। এর মধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনার অভাব, প্রকল্পের ব্যয়-সুবিধা বিশ্লেষণ বাস্তবসম্মত নয়, বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদেশি পরামর্শকদের বাংলাদেশের উন্নয়ন বাস্তবতার সঙ্গে সংযোগহীনতা, প্রকল্পের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিকল্পনাবিদ ও পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পৃক্ততা না থাকা অন্যতম।