পানির দাম আরও বাড়াতে চায় ওয়াসা

নতুন করে দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব। করোনার মধ্যেই দুই দফা দাম বাড়িয়েছে সংস্থাটি

করোনা মহামারির মধ্যে আবারও পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এ দফায় সংস্থাটি পানির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার বিশেষ বোর্ড সভায় গতকাল সোমবার দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব তোলা হয়। এখন বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য যাবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে রাজধানীবাসীকে বেশি দামে কিনতে হবে পানি।

ঢাকা ওয়াসা গত দুই বছরে দুবার আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৩ বছরে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ১৪ বার। যদিও পানির মান নিয়ে মানুষের অভিযোগের কোনো সুরাহা হয়নি।

বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী আবাসিকে এ দর ২১ টাকা ২৫ পয়সা করার কথা বলা হয়েছে। আর বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম বর্তমানে ৪২ টাকা। ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী, বাণিজ্যিক সংযোগে পানির দাম দাঁড়াবে ৫৮ দশমিক ৮ টাকা। ঢাকা ওয়াসা আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন দর কার্যকর করতে চায়।

ঢাকা ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা গত রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ উৎপাদন খরচের সঙ্গে পানির দাম সমন্বয় করতে চায়। অবশ্য বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

ওয়াসার বোর্ড সভার সদস্য ১৩ জন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন সদস্য গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সংকটে রয়েছেন। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় জনগণের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সার্বিক বিবেচনায় এখনই দাম বাড়ানো ঠিক হবে না বলে অধিকাংশ সদস্য সভায় মত দিয়েছেন।

অবশ্য এ মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না বলেই ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সূত্র জানিয়েছে। কারণ, ওয়াসার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের অবস্থানই প্রাধান্য পায়। তিনি গতকালের সভায় পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে সবচেয়ে তৎপর ছিলেন। সূত্রের দাবি, সভায় দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চ মহলের সায় আছে বলেও উল্লেখ করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বোর্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে পানির দামও বাড়লে মানুষের কষ্টের শেষ থাকবে না। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ যেভাবে যুক্তি তুলে ধরেছে, তাতে মনে হয়েছে দাম বাড়বেই।

রাজধানীতে করোনাকালে প্রথম দফায় পানির দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের এপ্রিলে। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আরেক দফা বাড়ে দাম। এ দুই দফায় আবাসিকে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম বেড়েছিল ৩ টাকা ৬১ পয়সা (৩১ শতাংশ)। বাণিজ্যিকে বেড়েছিল ৪ টাকা ৯৬ পয়সা (১৩ শতাংশ)।

পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। সংস্থাটির উপপ্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এম মোস্তফা তারেক বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না।

২০০৯ সাল থেকে ছয় মেয়াদে ১৩ বছর ধরে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে রয়েছেন তাকসিম এ খান। এ সময়ে তাঁর বেতন-ভাতা বেড়েছে ৪২১ শতাংশ।

ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় বেকারত্ব বেড়েছে। মানুষের আয় কমেছে। এর মধ্যে আরেক দফা পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে অমানবিক।