পার্কিংয়ের জায়গা থেকে উচ্ছেদ হলো দোকান

বেলা ১১টার দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন
ছবি: সাজিদ হোসেন

গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২–এ নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে আজ সোমবারও অভিযান চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বেলা ১১টার দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। দোকানিদের অভিযোগ, উচ্ছেদের আগে তাঁদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি।


গত ৮ ডিসেম্বর থেকে এ অভিযান চলছে। প্রথম দিন ব্যবসায়ীরা হামলা চালিয়ে অভিযান বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাঁদের নিবৃত্ত করেন। পরে শুরু হয় দোকান উচ্ছেদে অভিযান। এরপর ব্যবসায়ীরা অভিযানে আর বাধা দেননি। তবে আজ তাঁরা করপোরেশন থেকে অস্থায়ী বরাদ্দপত্র প্রদর্শন করে অভিযান বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছেন। ডিএসসিসি বলছে, অস্থায়ী বরাদ্দপত্রে যেকোনো সময় এসব দোকান উচ্ছেদ করা যাবে, এই শর্ত উল্লেখ ছিল।

ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত এই বিপণিবিতানে ৯১১টি নকশাবহির্ভূত দোকান চিহ্নিত করা হয়েছে। শৌচাগারের জায়গা, লিফটের জায়গা, সিঁড়ির নিচে ও মানুষের হাঁটার পথে যত্রতত্র এসব দোকান তৈরি করেছেন মালিক সমিতির নেতারা।

১৯৯৭ সালের এই বিপণিবিতানে ৫৩৪টি দোকান অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ দিয়েছিলেন প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। ওই বরাদ্দপত্রে শর্ত ছিল, ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করে উচ্ছেদ করতে হবে এবং ৩০ দিন আগে ব্যবসায়ীদের নোটিশ দিয়ে তা জানাতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের সময় এসব দোকানের অস্থায়ী বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সবশেষে প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিয়ের ছেলে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সময়ও অনেক দোকান অস্থায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়। করপোরেশনের নিয়ম মেনে তাঁরা এসব দোকানের ভাড়া দিয়ে আসছিলেন। উচ্ছেদের আগে তাঁদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি।

শৌচাগারের জায়গা, লিফটের জায়গা, সিঁড়ির নিচে ও মানুষের হাঁটার পথে যত্রতত্র এসব দোকান তৈরি করেছেন মালিক সমিতির নেতারা
ছবি: প্রথম আলো

ডিএসসিসি বলছে, অস্থায়ী বরাদ্দপত্রে যেকোনো সময় এসব দোকান উচ্ছেদ করা যাবে, এই শর্ত উল্লেখ ছিল। বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্দেশে তারা অভিযান চালাচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পার্কিংয়ের জায়গায় তৈরি দোকানে যাঁরা ব্যবসা করে আসছিলেন, তাঁরা আজ মার্কেটের সামনের সড়কে নেমে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তাঁরা দোকান না ভাঙার অনুরোধ জানান। পরে অভিযানকারী দল সড়ক থেকে তাঁদের সরে যেতে অনুরোধ করলে তাঁরা সরে যান।

ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত এই বিপণিবিতানে ৯১১টি নকশাবহির্ভূত দোকান চিহ্নিত করা হয়েছে। শৌচাগারের জায়গা, লিফটের জায়গা, সিঁড়ির নিচে ও মানুষের হাঁটার পথে যত্রতত্র এসব দোকান তৈরি করেছেন মালিক সমিতির নেতারা।

এ সময় জাকের প্লাজা ব্যবসায়িক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ১৯৯৭ সালের এই বিপণিবিতানে ৫৩৪টি দোকান অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ দিয়েছিলেন প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। ওই বরাদ্দপত্রে শর্ত ছিল, ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করে উচ্ছেদ করতে হবে এবং ৩০ দিন আগে ব্যবসায়ীদের নোটিশ দিয়ে তা জানাতে হবে। কিন্তু হুট করে পার্কিংয়ে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বিষয়টি নিয়ে করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা সময় দিচ্ছেন না।

নগর প্লাজার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি তাঁরা ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত এই দোকানগুলোর ভাড়া সিটি করপোরেশনে জমা দিয়েছেন। কিন্তু ভাড়া নেওয়ার সময় উচ্ছেদের বিষয়ে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি। এভাবে গণহারে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করলে সবাইকে পথে বসতে হবে। অবিলম্বে ডিএসসিসির এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।


জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরফান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মেয়রের নির্দেশে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ব্যবসায়ীদের কোনো দাবি বা কথা থাকলে মেয়রের কাছে বলতে হবে। নকশাবহির্ভূত সব দোকান উচ্ছেদ করতে আর কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি।