পুরস্কার জিতল আর্কেডিয়া এডুকেশন

সাইফ উল হক
সাইফ উল হক

একটি উভচর কাঠামোর স্কুল। এমন এলাকায় স্কুলটি, যে এলাকা বছরের কয়েক মাস পানির নিচে থাকে। যখন পানি আসে, তখন স্কুলটি ভেসে থাকে। যখন পানি চলে যায়, তখন তা মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকে। তৈরি করা হয়েছে ড্রাম, বাঁশ, দড়ি দিয়ে।

কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ কানারচরের ‘আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্ট’টির স্থপতি সাইফ উল হক। প্রজেক্টটি জিতেছে আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার, ২০১৯ পুরস্কার। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বেলা একটায় রুশ ফেডারেশনের তাতারস্তানের রাজধানী কাজানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

এবার আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার পেয়েছে বিভিন্ন দেশের ছয়টি প্রজেক্ট। বাংলাদেশ ছাড়া বাহরাইন, ফিলিস্তিন, রুশ ফেডারেশন, সেনেগাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রকল্প পুরস্কার জিতেছে। বিজয়ীরা ১০ লাখ ডলার অর্থমূল্যের পুরস্কার ভাগ করে নেবে।

আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার, ২০১৯-এ সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল ২০টি প্রজেক্ট। এর মধ্যে দুটি প্রজেক্ট ছিল বাংলাদেশের। আর্কেডিয়া এডুকেশন ছাড়া গাজীপুরের আম্বার ডেনিম লুম শেড সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল।

আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্টটি সম্পর্কে প্রতিযোগিতার বিচারকেরা বলেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সময় স্থানীয় সামগ্রী ব্যবহার করে কীভাবে সাশ্রয়ী ও টেকসই সমাধান সম্ভব, তা বাঁশের তৈরি স্কুলটি দেখিয়েছে। প্রজেক্টটি স্থপতি, নির্মাতা ও গ্রাহকের দলীয় প্রচেষ্টার ফল। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তাঁরা স্কুলটি নির্মাণে উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখিয়েছেন।

প্রথম আলোর কেরানীগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি গতকাল দক্ষিণ কানারচর এলাকার কলাতিয়া–হেমায়েতপুর সড়কে দক্ষিণ কানারচরে ভাসমান বিদ্যালয়টি দেখতে যান। ইটাভাড়া সেতু-সংলগ্ন বুড়িগঙ্গার শাখানদীর তীরে বাঁশ ও ড্রাম দিয়ে তৈরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নদীতে ভাসছিল। ঝকঝকে–তকতকে স্কুল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক বিভাগের মো. আবদুস সালাম প্রথম আলোকে জানান, এখানে বছরে ৯ মাস ক্লাস চলে। বর্ষার সময় নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখতে হয়। এখন স্কুল বন্ধ রয়েছে।

স্থপতি সাইফ উল হক দেশের বাইরে। মুঠোফোনের খুদে বার্তায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো স্থাপনার জন্য আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার পাওয়া সম্মানের। প্রজেক্টে আমার সঙ্গে অনেকে কাজ করেছেন, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্ট পেয়েছে আগা খান পুরস্কার। গতকাল কেরানীগঞ্জে।  ইকবাল হোসেন
আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্ট পেয়েছে আগা খান পুরস্কার। গতকাল কেরানীগঞ্জে। ইকবাল হোসেন

মালেকা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের জন্য আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্টটির নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণ শেষ হয়। নির্মাণে ব্যয় হয় ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ৭০০ টাকা।

প্রজেক্টটি সাধারণ হলেও এটি নদীর স্রোতে বাধা দেওয়া এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো জটিল বিষয়গুলোর সমাধান করেছে বলে পুরস্কারের বিচারকেরা মনে করেছেন। তাঁরা বলেন, জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার মতো বৈশ্বিক সমস্যা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে প্রজেক্টটি সমাধান পথ দেখিয়েছে।

স্থাপত্য পুরস্কারের ক্ষেত্রে প্রাচীন ও সম্মানজনক আগা খান অ্যাওয়ার্ড দেওয়া শুরু হয় ১৯৭৭ সাল থেকে। প্রতি তিন বছর পর এ সম্মাননা দেওয়া হয়।

এর আগে ২০১৬ সালে স্থাপত্যবিদ্যার এই পুরস্কার জিতেছিলেন দুই বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম ও কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। তাঁরা দুজন এ পুরস্কার জয় করার আগে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশিদের দ্বারা নির্মিত তিনটি স্থাপনা পেয়েছিল এ পুরস্কার। এগুলো হলো জাতীয় সংসদ ভবন, গ্রামীণ ব্যাংক হাউজিং প্রকল্প ও রুদ্রপুর স্কুল।