পুরান ঢাকায় ফানুস–আতঙ্ক, না ওড়াতে অনুরোধ ডিএমপির

‘সাকরাইন উৎসব’ উপলক্ষে পুরান ঢাকায় ঘুড়ি-নাটাই-সুতা বিক্রি করছেন অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী
ছবি: প্রথম আলো

বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন উদ্‌যাপন করা হয় ‘পৌষসংক্রান্তি’। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার মানুষ ‘পৌষসংক্রান্তির’ দিনটিকে ‘সাকরাইন উৎসব’ হিসেবে পালন করেন। বেশ কয়েক বছর ধরে ঘুড়ি ওড়ানো এ উৎসবের অংশ হয়ে আছে।

উৎসব উপলক্ষে বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে বন্ধুদের নিয়ে ঘুড়ি, নাটাই ও সুতা কিনতে এসেছেন সৌমিত রায়। আগামীকাল শুক্রবার সাকরাইন উৎসবে বন্ধুরা মিলে ঘুড়ি ওড়াবেন। প্রতিবছরের মতো এ বছরও স্থানীয় বাসিন্দারা উৎসবটি উদ্‌যাপন করবেন। তবে এবারের উৎসবকে ঘিরে আনন্দের পাশাপাশি রয়েছে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা। কারণ, সম্প্রতি ইংরেজি নববর্ষ উদ্‌যাপনে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ফানুসের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। তাই এবার সাকরাইন উৎসবে ফানুস–আতশবাজি এড়িয়ে চলার প্রত্যাশা করছেন পুরান ঢাকাবাসী।

উৎসবের আগের দিন আজ পর্যন্ত সরকারি কোনো বিধিনিষেধ দেওয়া হয়নি। তবে নগরীতে ফানুস না ওড়াতে অনুরোধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির উপকমিশনার ফারুক হোসেনের সঙ্গে কথা হয় এ বিষয় নিয়ে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উৎসব উপলক্ষে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ দেওয়া হয়নি। তবে পুরান ঢাকার মতো ঘিঞ্জি এলাকায় ফানুস-আতশবাজি এড়ানোর অনুরোধ করব। প্রয়োজনে খোলা স্থানে ওড়ানো যেতে পারে।’

এদিকে, ফানুস–আতশবাজি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকেই। তাঁদের একজন ‘প্রত্যাশা’ মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামান্য কিছুক্ষণের আনন্দের জন্য অনেককেই পথে বসতে হতে পারে। ফানুসের দাম কম থাকায় ও সহজলভ্য হওয়ায় সহজে অনেকে সংগ্রহ করছে। এর ফলে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। এ জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলে ভালো হতো।’

খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদ্যাপনে ফানুস উড়ানোর সময় পুরান ঢাকার ধোলাইখাল এলাকার কয়েকটি দোকানে আগুন লাগে—
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে ও সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলে ফানুস না ওড়াতে নিরুৎসাহিত করেছি। যেহেতু সরকারি নির্দেশনা নেই, এখন নিজেদের সচেতন হতে হবে।’

এদিকে ফানুস ও আতশবাজি বিক্রিতে কর্তৃপক্ষের বিধিনিষেধ না থাকলেও এগুলো প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন না পুরান ঢাকার বিক্রেতারা। ধূপখোলার এক মৌসুমি ঘুড়ি ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটের ঘটনার পর আমরা নতুন করে ফানুস–আতশবাজি সংগ্রহ করিনি। আগে যেগুলো মজুত ছিল, সেগুলো যারা চাইছে, তাদের কাছে বিক্রি করছি।’

সাকরাইন উৎসবে পুরান ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয় ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উৎসবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেদিকে আমাদের নজর থাকবে। এ ছাড়া ঝুঁকি নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান না করতে আমরা সবাইকে অনুরোধ করব।’

আরও পড়ুন