পুলিশ বক্সের পাশেই মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ড, বিভিন্ন জেলার যাত্রী পরিবহন

আবদুল্লাহপুর মোড়ের অস্থায়ী মাইক্রোবাসস্ট্যন্ডে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। আজ সকালে আবদুল্লাহপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে।
প্রথম আলো

রোববার সকাল আটটা। রাজধানীর আবদুল্লাহপুরে হাজারো ঘরমুখী মানুষের জটলা, গাড়ির অপেক্ষা। এর মধ্যেই কয়েকজন পরিবহনশ্রমিকের ‘ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ’ বলে হাঁকডাক। ময়মনসিংহগামী কোনো যাত্রী থাকলে সাড়া দিচ্ছেন তাঁদের ডাকে। এরপর ভাড়া নিয়ে দর–কষাকষি শেষে রওনা দিচ্ছেন গন্তব্যে।
ময়মনসিংহ যাওয়ার বাহন মাইক্রোবাস। সারি করে রাখা হয়েছে আবদুল্লাহপুর মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পাশেই। একেকটি গাড়িতে যাত্রী ওঠানো হয় ১২ থেকে ১৩ জন। ভাড়া ৫০০ টাকা করে। এর বাইরে কেউ ভৈরব, জামালপুর বা অন্য জায়গায় যেতে চাইলেও গাড়ি ভাড়া করা যায়। আর এসব গাড়িতে যাত্রী তোলার কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৮ থেকে ১০ জন পরিবহনশ্রমিক। রাস্তায় গাড়ির অপেক্ষায় কোনো যাত্রী দেখলেই ডেকে নিচ্ছেন তাঁরা।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গাড়ি চলাচল নিষেধ। কিন্তু এখান থেকে গাড়িগুলো চলছে কীভাবে? জানতে চাইলে কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক বললেন, তাঁরা সবাই ময়মনসিংহগামী বিভিন্ন পরিবহনের চালক, সহকারী। লকডাউনের কারণে গাড়ি না চলায় এখন বেকার। এরপর চলতে কষ্ট হওয়ায় কয়েকজন মিলে পুলিশ বক্সের পাশেই মাইক্রোস্ট্যান্ড গড়ে তুলেছেন। লকডাউনের পর থেকে দূরদূরান্তের যাত্রী পরিবহন করছেন তাঁরা।
সে ক্ষেত্রে কোনো রকম পুলিশি বাধার সম্মুখীন হতে হয় কি না, জানতে চাইলে সাজু ও মোহাম্মদ আলী নামের দুই শ্রমিক জানান, স্ট্যান্ড থেকে দৈনিক ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয় পুলিশ বক্সে। এর বাইরে তাঁদের সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাতে হয়। সাজু বলেন, ‘লকডাউনে কাজ হারাইয়া আমাদের খুব কষ্টে দিন কাটছে। তাই বাধ্য হয়েই এ কাজ করতে হচ্ছে। দিন শেষে ২০০ টাকাও থাকে না। তা ছাড়া শত শত মানুষ বাড়ি যেতে গাড়ি পাচ্ছেন না। আমরা তাঁদের সহযোগিতা করছি।’

আবদুল্লাহপুর মোড়ে প্রাইভেট কারে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। আজ সকালে আবদুল্লাহপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে।
প্রথম আলো

একই চিত্র দেখা যায় পুলিশ বক্সের ঠিক উল্টো পাশে। এখানে মেসার্স উত্তরা ফিলিং অ্যান্ড সিএনজি স্টেশনে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী আরেকটি প্রাইভেট কার স্ট্যান্ড। এখান থেকে যাত্রী নেওয়া হয় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এখানেও দেখা যায় পরিবহনশ্রমিকদের হাঁকডাক। এর মধ্যে একেকটি গাড়িতে গাদাগাদি করে বা ঝুঁকি নিয়ে একাধিক যাত্রী উঠতে দেখা গেছে। এখান থেকেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদায় গাড়ি চলতে দেওয়া হয় বলে জানায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিক।
সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে গাড়ি চলতে দেওয়া বা উৎকোচ নেওয়ার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ বক্সে থাকা ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা কোনো গাড়ি চলতে দিই না। আমাদের রেকার সব সময় প্রস্তুত আছে। কোনো গাড়ি এভাবে চলতে দেখলেই আমরা রেকারে দিই, জরিমানা করি।’ উৎকোচ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ’এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। যে বা যাঁরা বলেছে, মিথ্যা বলেছে।’
এর বাইরে পুরো আবদুল্লাহপুর মোড়ে বিভিন্ন এলাকার ঘরমুখী মানুষের জটলা দেখা যায়। কেউ হেঁটে, কেউ রিকশায় আবার কেউবা বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছেন আবদুল্লাহপুর মোড়ে। হাতে গাট্টি–বোঁচকা, ব্যাগ বা বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ উঠছেন এসব মাইক্রোবাসে। কেউ কেউ চেষ্টা করছেন মোটরসাইকেল বা অন্যান্য যানবাহনে চড়ে বাড়ি যাওয়ার।
যানবাহনের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা শেষে একটি মোটরসাইকেলে করে নরসিংদীর পাঁচদোনার উদ্দেশে রওনা দেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আবু কাউছান। ভাড়া ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, আবদুল্লাহপুর থেকে সরাসরি নরসিংদীর কোনো গাড়ি পাওয়া যায় না। আবদুল্লাহপুর পার হয়ে টঙ্গী স্টেশন রোড গিয়ে সিএনজিতে করে যেতে হয়। তাই এত ঝামেলায় না গিয়ে সরাসরি মোটরসাইকেল ভাড়া করেছেন। খরচ বেশি হলেও ঝক্কিটা কম।

একই সময় কথা হয় মোটরসাইকেলচালক মো. নাহিদের সঙ্গে। তিনি জানান, লকডাউন শুরুর পর থেকে তিনি ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় যাত্রী পরিবহন করেন। এর মধ্যে কোথাও কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ মাঝেমধ্যে পথ আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন নানা অজুহাত দেখালে ছেড়ে দেয়।
গাজীপুর থেকে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন লোকাল পরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়। এসব যানে ছিল যাত্রীদের ভিড়। আবদুল্লাহপুর পার হয়ে টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নরসিংদীগামী সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভিড়। চুক্তিতে বা আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে যাত্রীরা যাচ্ছেন নরসিংদী জেলার বিভিন্ন অংশে। এর বাইরে গাজীপুর থেকে ঢাকায় অনেক যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের পুলিশি চেকপোস্ট জোরদার আছে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াতকারী গাড়িগুলোকে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে।’