পুলিশের ভূমিকার কড়া সমালোচনায় নুরুল হক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন নুরুল হক
ছবি: প্রথম আলো

সাম্প্রতিক বিভিন্ন আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন তিনি।

আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নুরুল হক এই ঘোষণা দেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে নুরুলের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদ এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে পুলিশের উদ্দেশে নুরুল হক বলেন, ‘পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কি ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ? আওয়ামী লীগ-বিএনপি ক্ষমতায় আসবে-যাবে, সময়ের সঙ্গে অনেকে বিলীন হয়ে যাবে, কিন্তু আপনারা যেদিন চাকরিতে ঢুকেছেন, সেদিন থেকে অবসরের আগপর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনারা কেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন?’ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের গাড়ি না রাখার আহ্বানও জানান তিনি।

নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ এখন আ.লীগের অঙ্গসংগঠন
পুলিশকে উদ্দেশ করে নুরুল আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার টিস্যুর মতো যখন যাকে প্রয়োজন ব্যবহার করবে, তারপর ছুড়ে ফেলে দেবে। অনেককেই তারা ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। বিনা ভোটের সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে গিয়ে আপনারা নিজেদের কলঙ্কিত করছেন, স্বকীয়তা নষ্ট করছেন। দলীয়করণ করতে করতে এই সরকার রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে ফেলছে। অনেকেই বলছেন যে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ এখন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে। এই দায় বর্তমান বিনা ভোটের সরকার ও তাদের সুবিধাভোগী কিছু কুচক্রীর। এই সরকার যা করছে, তাতে তারা আর টিকতে পারবে না, গায়ের জোরেও টিকতে পারবে না। তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। জনগণ রাজপথে নেমে আসছে।’

এই হারুন সাহেবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদের কড়া সমালোচনা করে নুরুল হক বলেন, ‘আমার লজ্জা হয় যে রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদ নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।

গত শুক্রবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরই তিনি নির্মমভাবে পিটিয়েছেন। ডাকসুর সাবেক ভিপি হিসেবে আমি এই হারুন সাহেবকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। তিনি ছাত্রলীগের গুন্ডার ভূমিকা নিচ্ছেন। আরেক হারুন সাহেব (ডিএমপির উপকমিশনার হারুন অর রশীদ) বিরোধদলীয় চিফ হুইপকে (বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন ফারুক) সন্ত্রাসীদের মতো বেধড়ক পিটিয়ে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এই জুনিয়র হারুনও পদোন্নতির ধান্দায় সরকারের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য অপকর্ম করে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের মারছেন, নারীদের লাঞ্ছিত করছেন, সব আন্দোলনে মানুষের সঙ্গে অমানুষিক আচরণ করছেন তিনি। হারুনের মতো ছাত্রদের কারণে লজ্জায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথা হেট হয়ে যায়।’

নুরুল আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের পর থেকে বিদেশি অপশক্তির প্রশ্রয়ে একটা অগণতান্ত্রিক সরকার দেশকে একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য কাজ করছে। দেশে একদলীয় শাসন কায়েমের একটা অপচেষ্টা চলছে। এটি আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজ আমরা শিক্ষকদের রাজপথে নেমে আসতে দেখতে পাই না। এখন কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদও আমরা দেখতে পাই না। সেই কারণেই আজকে কারাগারের মতো জায়গায় একজন লেখককে মরতে হয়েছে। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।’

মুশতাকের মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য লজ্জার
সমাবেশে ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, লেখক মুশতাকের মৃত্যু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য লজ্জার। এই সরকার মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়। রাশেদ অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মির্জা কাদের নোয়াখালীতে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের হত্যার সঙ্গে জড়িত।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান ও সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন, কর্মী আকরাম হুসাইন, সালেহ উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশ শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টিএসসি ও শাহবাগ ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।

চার দফা কর্মসূচি
এই কর্মসূচি থেকে নুরুল চার দফা জানিয়েছেন। এগুলো হলো শাহবাগে গত শুক্রবার মশাল মিছিল থেকে আটক সাতজন শিক্ষার্থী, রোববার টিএসসি থেকে আটক তিন শিক্ষার্থীসহ আটক সব শিক্ষার্থীর নিঃশর্ত মুক্তি; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, লেখক মুশতাক আহমেদ ‘হত্যার’ সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ধরনের পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণ বাক্স্বাধীনতা ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা।