পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ-লাঠিপেটা, ছাত্রদলের সমাবেশ পণ্ড

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি
ছবি: সাইফুল ইসলাম

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ রোববার সমাবেশটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমাবেশ শুরুর আগেই পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদল ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এতে বিক্ষোভ সমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল ১০টার দিকে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাব ও তার আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১১টার পর নেতা-কর্মীদের একটি অংশ প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করে। তাদের বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী বেরিয়ে সড়কে বসে পড়েন। এ সময় পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে তুলে দেয়। তারপরই এলাকায় উপস্থিত ছাত্রদল ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

রোববার বেলা ১১টার পর এই সংঘর্ষ শুরু হয়
ছবি: সাইফুল ইসলাম

শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়েন। আশপাশে ভাঙচুরও করেন। তাঁদের ধাওয়া করে পুলিশ। যাঁকে সামনে পায়, তাঁকে লাঠিপেটা করে। বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের ধাওয়ার মুখে বিএনপি-ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মী জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে পড়েন। সেখানে ঢুকে নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে কিছু কর্মী বিএমএ ভবনের কোনায় অবস্থান নেন। তাঁরা সেখান থেকে স্লোগান দিতে থাকেন।

পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছাত্রদল-বিএনপির নেতা-কর্মী, পুলিশ ও সাংবাদিক রয়েছেন।

সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
ছবি: আহমেদ দীপ্ত

ছাত্রদলের এই সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আসার কথা ছিল। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রদলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এম এ গাফফারসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ শুরুর আগেই তা পণ্ড হয়ে যায়।

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনীক প্রথম আলোকে বলেন, লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচি পালনের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে প্রায় ৫০০ নেতা-কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। বেলা ১১টার পর হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে তাঁরা বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাঁদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। নেতা-কর্মীরা বের হওয়া মাত্রই পুলিশ বেপরোয়া লাঠিপেটা শুরু করে। এরপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছোড়ে। বিএনপি-ছাত্রদলের অনেকে আহত হয়েছেন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মামুন খান, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক করিম প্রধান ও ইডেন কলেজের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জান্নাত জাহান রয়েছেন।

সংঘর্ষে আহত পুলিশের এক সদস্যকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
ছবি: সাইফুল ইসলাম

পুলিশ বলছে, ছাত্রদলের সমাবেশ করার অনুমতি ছিল না। কেউ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠান করতে পারে। কিন্তু জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করা যাবে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এখানে সমাবেশ করার জন্য ছাত্রদল কোনো অনুমতি নেয়নি। তারা অনুমতি না নিয়ে প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ৪০০-৫০০ জন কর্মীসহ সড়কে নেমে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের সাত থেকে আটজন সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কয়েক ব্যক্তি হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

এ হামলাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেন সাজ্জাদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রেসক্লাবের ভেতরে এত ইট নেই। এত ইট এল কীভাবে? এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন