প্রশ্নপত্র ফাঁসের নেতৃত্বে মাউশির এক কর্মকর্তা: ডিবি

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি)
ছবি: সংগৃহীত

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) একজন কর্মকর্তাই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছিলেন বলে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তে উঠে এসেছে। সন্দেহভাজন ওই কর্মকর্তাকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে তিনি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (উপমহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) হারুন অর রশীদ আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, মাউশির ওই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত পুরো চক্রের সন্ধান পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আমরা মাউশির যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন পরীক্ষা বাতিল করা না করা তাদের সিদ্ধান্ত।’

অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে গত শুক্রবার ঢাকার ৬১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। ৫১৩টি পদের জন্য পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার। রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে সুমন জোয়াদ্দার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর প্রবেশপত্রের পেছনে ৭০ নম্বরের উত্তর লেখা ছিল।

ডিবি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সুমন স্বীকার করেন, পরীক্ষা শুরুর ৪২ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের উত্তর পেয়েছিলেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত চার দিনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এক কর্মকর্তাসহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মুঠোফোনের তথ্য যাচাই-বাচাই করে ডিবি বলছে, সুমনকে উত্তরপত্র পাঠিয়েছিলেন পটুয়াখালীর খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। গত সোমবার রাজধানী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সাইফুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর টিকাটুলী ও ওয়ারী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৪তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রাশেদুল ইসলাম, মাউশির উচ্চমান সহকারী আহসান হাবিব ও অফিস সহকারী নওশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এ চক্রের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন এমন চাকরি প্রার্থীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাউশির ওই শিক্ষা কর্মকর্তার প্রশ্নপত্র নিয়ে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্রে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়ার পথে তা ফাঁস করেন। পরে চক্রের সদস্যরা প্রশ্নপত্র সমাধান করে নির্ধারিত চাকরি প্রার্থীদের মুঠোফোনে পাঠিয়েছিলেন।

এই পরীক্ষা বাতিল করা হতে পারে বলে মাউশির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আজ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে গতকাল মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমাদের কথা হলো ডিবি পুলিশ যে সুপারিশ দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তারা যদি বলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, তাহলে পরীক্ষা বন্ধ করে দেব।

আমাদের ভবিষ্যতেও পরীক্ষা নিতে হতে হবে। তাই চক্রটি যদি মাউশির ভেতরও থাকে, তাহলেও যেন বের করা হয়। আমরা চাই এর উৎস বের করা হোক।’