প্লাস্টিকের কারণে ঢাকাসহ বড় শহরে জলাবদ্ধতা

ঢাকায় একবার ব্যবহারের পর ৮০ শতাংশ প্লাস্টিক ও পলিথিন মাটিতে ফেলা হচ্ছে। এগুলো নালা, খাল ও নদী হয়ে সাগরে পড়ছে।

  • ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পলিথিনের ব্যবহার তিন গুণের বেশি বেড়েছে।

  • চর্মরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ুজনিত রোগসহ নানা রোগের জন্য দায়ী প্লাস্টিক।

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু তাতে দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি, বরং বেড়েছে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে পলিথিন ব্যাগ। জার্মানির হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণা বলছে, ঢাকা মহানগর প্লাস্টিক ও পলিথিনের বোমার ওপর বসে আছে। এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দশম স্থানে রয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এর ব্যবহার তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ঢাকায় একবার ব্যবহারের পর এগুলোর ৮০ শতাংশ মাটিতে ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে নালা ও খাল হয়ে নদীতে পড়ছে। সর্বশেষ ঠাঁই হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। নদী হয়ে সাগরে যাওয়া প্লাস্টিক ও পলিথিন–দূষণে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।

হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়সহ জার্মানির দুটি ও বাংলাদেশের বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের যৌথ গবেষণা গত বছর বিজ্ঞান সাময়িকী আর্থ-এ প্রকাশিত হয়। ‘প্লাস্টিক বোমার ওপর ঢাকা: বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানির মান ও জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ’ শীর্ষক ওই গবেষণায় ঢাকায় বড় বিপর্যয়ের আগে পলিথিনের ব্যবহারে দ্রুত লাগাম

শুধু আইন করে পলিথিনের ব্যবহার যে বন্ধ করা যাবে না, তার প্রমাণ ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহর।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী

টানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই বছর বিশ্বব্যাংক তার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। সেখানে ২০২১ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার ও উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার পরামর্শ ও কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যথাযথ বিকল্প তৈরি না করলে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা কঠিন। তাই আমরা এমন পণ্য উৎপাদনের প্রস্তাব করেছি, যার বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা যাবে।’

গবেষণায় দেশের ছয় ধরনের প্লাস্টিক-পলিথিন দূষণের প্রভাব চিহ্নিত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, দেশে বছরে ১৭ হাজার টন পাতলা প্লাস্টিক ও পলিথিন মাটিতে পড়ছে। এর ৭৩ শতাংশ মাটি ও পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। পানি ও খাবারের সঙ্গে মিশে তা মানুষের শরীরে যাচ্ছে। এতে মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া থেকে শুরু করে চর্মরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ুজনিত রোগসহ নানা রোগবালাই বাড়ছে।

ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসান আহমেদ তৌফিক ঢাকায় পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহারের সঙ্গে জলাবদ্ধতার সম্পর্ক নিয়ে আরেকটি গবেষণা করেন। ২০২১ সালের ওই গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, বর্ষায় মৌসুমি ফল বিক্রির সঙ্গে ঢাকায় পলিথিনের ব্যবহার বেড়ে যায়। ওই পলিথিনের বড় অংশ মাটিতে ফেলা হয়, যা বৃষ্টির পানির সঙ্গে নালা হয়ে খাল, নদী ও ভূগর্ভে জমা হচ্ছে। ফলে বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিকদের উচিত পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাটের পণ্য ব্যবহার করা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শুধু আইন করে পলিথিনের ব্যবহার যে বন্ধ করা যাবে না, তার প্রমাণ ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহর।

রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দেশে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিলেট শহরে সাম্প্রতিক বন্যার কারণ হিসেবে সেখানকার নদ-নদীর
নিচে পলিথিনের স্তর জমা হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দ্রুত পলিথিন বন্ধ করা সম্ভব।