ফাঁকা বইমেলায় লোকসান গুনছেন প্রকাশকেরা

পাঠকশূন্য একুশে বইমেলার এমন চিত্র আগে দেখেননি প্রকাশকেরা
ছবি: হাসান রাজা

দেশজুড়ে লকডাউনের মধ্যে রাস্তায় গণপরিবহন বিশেষ নেই। আগের দুদিন তো বাসই ছিল না। আজ বুধবার দু-একটি বাস চললেও রাজধানীর পথে চেনা সেই ভিড় দেখা যায়নি। বইমেলার পরিস্থিতিও ছিল একই রকম। চৈত্রের কাঠফাটা রোদের দুপুরে মেলার দরজা খুললেও পাঠক কিংবা ক্রেতার দেখা নেই।

নিয়ম রক্ষা করে দুপুর ১২টায় মেলা খুলছে ঠিকই। এরপর বিক্রেতাদের স্টলে বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই। রোদের তাপ কমে এলে তিনটার পর একজন-দুজন করে লোক মেলার মাঠে আসতে থাকেন। পাঁচটায় মেলা বন্ধ। শেষ ঘণ্টাখানেক কিছু তরুণ-তরুণীর আনাগোনা দেখা যায় মেলার মাঠে। তাঁদের শতকরা ১০ জনও বই কেনেন না। আসেন বেড়াতে।

ছোট প্রকাশকদের খুবই খারাপ অবস্থা। বেচাকেনা শূন্য, মেলা খোলা বলে স্টল খুলতে হচ্ছে, কমপক্ষে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ প্রতিদিন। ম্যাগনাম ওপাসের প্রকাশক আনোয়ার ফরিদী আজ মেলার মাঠে প্রথম আলোকে বললেন, একেবারেই অসহ্য পরিস্থিতি। গত তিন দিনে ১০০০ টাকার বইও বিক্রি হয়নি তাঁর স্টলে। দুজন কর্মচারী। রোজ তাঁদের ৬০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এর ওপর বিকেলের নাশতা আর তাঁর নিজের যাতায়াত খরচ মিলিয়ে রোজ হাজার টাকার ওপরে খরচ। লোকসানই যদি হচ্ছে তবে কেন স্টল খুলছেন? এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভয়ে। স্টল বন্ধ করে দিলে আগামী বছর হয়তো স্টলের বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। সবার মনেই এই ভয় কাজ করছে। এ জন্যই ক্ষতি মেনেও স্টল খোলা রাখছেন সবাই।’

পাঞ্জেরি পাবলিকেশনসের প্যাভিলিয়নে কথা হলো ব্যবস্থাপক মো. নুরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, বইমেলার একটা বড় ক্রেতা আসেন ঢাকার বাইরে থেকে। ঢাকায় অনেক বইয়ের দোকান আছে, সেখান থেকে সারা বছরই পাঠকেরা সৃজনশীল বই কিনতে পারেন। কিন্তু ঢাকার বাইরে মফস্বল শহরগুলোতে সৃজনশীল বইয়ের দোকান বলতে গেলে নেই। যেসব বইয়ের দোকান আছে তাতে মূলত পাঠ্যবই আর নোট-গাইড বিক্রি হয়। কোনো কোনো দোকানে জনপ্রিয় লেখকদের কিছু উপন্যাস-কবিতা আর ধর্মীয় বই পাওয়া যায়। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঠকেরা বইমেলার সময় তালিকা নিয়ে ঢাকায় আসেন পছন্দের বই কিনতে। মেলার মোট বেচাকেনার একটা বড় অংশ তাদের ওপর নির্ভর করে। এবার এই ক্রেতারা মেলায় আসেননি। আবার করোনার কারণে ঢাকার ক্রেতারাও মেলায় আসতে তেমন আগ্রহী হননি। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে মেলা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রতিদিন প্যাভেলিয়নগুলো চালাতে যে খরচ হচ্ছে, সে খরচই উঠছে না।

ক্রেতা নেই, বেচাকেনাও নেই। অথচ রোজ খুলতে হচ্ছে স্টল
ছবি: হাসান রাজা

প্রথমার বই

প্রথমার স্টলে এসেছে বদরুল আলম খানের নতুন বই ‘সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙল কেন’। এতে রয়েছে ইতিহাস-কাঁপানো রুশ বিপ্লব, আনকোরা নতুন সমাজ নির্মাণের স্বপ্ন, বিভীষিকাময় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধের শীতল তিমিরাচ্ছন্ন ৫০ বছর। রুশ আত্মার সন্ধানে জারতন্ত্রের আদি থেকে শেষ ইতিহাস, তার শিল্প, সাহিত্য, চিত্রকলা, সিনেমা, সংগীত আর দর্শনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ।

অন্য বইটি আবীর শওকত হায়াতের ‘ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট’। জীবন ও ক্যারিয়ার বহতা নদীর মতো একটি অনিশ্চিত যাত্রা, যাকে মহিমান্বিত করতে হয়। বইটি ক্যারিয়ারের চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার পথনির্দেশনা দেবে।

অন্য বই

আজ বুধবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৬৯টি। এবারের মেলার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে বেঙ্গল পাবলিকশনসের ‘প্রয়াত শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান স্মরণ’। বইটি সম্পাদনা করেছেন আবুল হাসনাত, এটি তাঁর সম্পাদিত শেষ বই। বিদ্যাপ্রকাশ এনেছে মোহিত কামালের উপন্যাস ‘আত্মার বিলাপ’। কথা প্রকাশ এনেছে রেজানুর রহমানের কিশোর উপন্যাস ‘বঙ্গবন্ধুর বাড়ি’, কাজী আলিম-উজ-জামানের ‘ঢাকার গণপাঠাগার: আলোয় ভরা ভুবন’ প্রকাশ করেছে শ্রাবণ, পাওয়া যাচ্ছে পাঠক সমাবেশের স্টলে। আগামী এনেছে জান্নাত-এ-ফেরদৌসীর গবেষণা গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা’।

অন্বেষা এনেছে ড. আহমেদ সুমনের ‘জনসংযোগ: তত্ত্ব ও যোগাযোগ’, রেনেসাঁ এনেছে প্রত্যয় জসীমের ‘ইতিহাস প্রসিদ্ধ বিপ্লব’। সমগ্র প্রকাশনী এনেছে মাহফুজার রহমান সম্পাদিত ‘নোবেলজয়ী মুসলিম ব্যক্তিত্ব’।