ফাইজারের টিকার জন্য প্রবাসীদের বিক্ষোভ

দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ফাইজারের টিকার দাবিতে কয়েক শ প্রবাসী হাসপাতালের দোতলায় করোনার টিকাকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করেন।
ছবি: সাজিদ হোসেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে করোনার টিকা নিতে এসেছেন মো. আরিফ। তিনি ফাইজারের টিকা নিতে চান। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ফাইজারের টিকা দেওয়ার টার্গেট কোটা শেষ হয়ে গেছে। মডার্নার টিকা হাসপাতালে আছে।

আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্র এটি। ফাইজারের টিকার দাবিতে প্রবাসী শ্রমিকেরা দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন। শ্রমিকেরা বলছেন, ফাইজারের টিকা নেওয়ার জন্য তাঁরা বিভিন্ন জায়গা থেকে সকালেই হাসপাতালে হাজির হয়েছেন। সকালে ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়েছিল। বেলা বাড়তেই হাসপাতার কর্তৃপক্ষ জানায়, ফাইজারের টিকা শেষ হয়ে গেছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হাসপাতালে মডার্নার টিকা আছে প্রবাসীদের জন্য।

মো. আরিফের অভিযোগ, তিনি সৌদি আরবে যাবেন মাস তিনেকের মধ্যে। এ জন্য তাঁর ফাইজারের টিকাই নেওয়া লাগবে। সকালে ফাইজারের টিকা দেওয়া হলেও কিছুক্ষণ পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় এক আনসার সদস্য তাঁর কাছে ফাইজারের টিকা দেওয়া যাবে বলে টাকা চান। আরিফ বলেন, ‘আমার কাছে এক আনসার সদস্য ৫০০ টাকা চেয়েছিল। আমার পকেটে ৫ টাকা নাই, ৫০০ টাকা কীভাবে দিব। তখন আরেক আনসার সদস্য আমাকে টাকা দিতে মানা করেন।’

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, প্রবাসীদের জন্য ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ফাইজারের টার্গেট ১ হাজার ২০০ টিকা সকালে শেষ হয়ে যায়। এ সময় প্রবাসীরা ফাইজারের টিকা নেওয়ার জন্য হইচই করেন। অথচ তাঁরা মডার্নার টিকা নিতে চান না। তিনি বলেন, ‘ফাইজারের টিকা ও মডার্নার টিকা একই। এই সিদ্ধান্ত তো আমাদের হাতে নেই। আমরা তাঁদের বলেছি, মডার্নার টিকা নিলেও কোনো অসুবিধা হবে না। প্রবাসীদের কেউ কেউ মডার্নার টিকা নিতে রাজি হয়েছেন।’

দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ফাইজারের টিকার দাবিতে কয়েক শ প্রবাসী হাসপাতালের দোতলায় করোনার টিকাকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় কেন্দ্রে ঢোকার কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। হাসপাতালে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য। পরে এক ঘণ্টা পর আবার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।

বিক্ষোভের সময় কেন্দ্রে ঢোকার কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ছবি: সাজিদ হোসেন

উল্লেখ্য, ৫ জুলাই অনলাইনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিদেশগামী কর্মীদের মধ্যে যাঁরা সৌদি আরব ও কুয়েত যাবেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনাভাইরাসের টিকা পাবেন। আর যাঁরা অন্য দেশে যাবেন, তাঁরা চীনের সিনোফার্মের টিকা পাবেন।

করোনার টিকা নিতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এসেছেন বগুড়া থেকে মো. জামাল উদ্দিন। তিনি কাজের জন্য মাস তিনেকের মধ্যে সৌদি আরবে যাবেন। জামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল থেকে টিকার জন্য অপেক্ষা করতেছি। এখন হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে, ফাইজারের টিকা শেষ। তারপর অনেকক্ষণ হইচই হলো। এখন মডার্নার টিকা নিলে যদি সৌদিতে যেতে অনুমতি না দেয়, তাহলে এর দায় কে নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন মডার্নার টিকা নেওয়া ছাড়া তো কোনো উপায় নেই। বগুড়া থেকে প্রাইভেট কার ভাড়া করে এসেছি। তিন হাজার টাকা খরচ হলো।’

মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে এসেছেন মো. আজাদ আলী। তিনি সকাল সাতটায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পৌঁছান টিকা নেবেন বলে। তিনি বলেন, ‘ফাইজারের টিকা নেই, তাহলে আমাদের মোবাইলে মেসেজ দিল কেন। আমাদের ফাইজারের টিকা দরকার। মডার্নার টিকা নিলে যদি সৌদি আরবে ঢুকতে না দেয়, তাহলে তখন এটা কে ঠিক করবে। এভাবে প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি কেন করা হলো।’

বেলা একটা থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পুরুষ বুথে আবার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রবাসীদের বোঝানোর পর তাঁরা কিছুটা শান্ত হন। এ সময় প্রবাসীদের অনেকেই মডার্নার টিকা নিতে রাজি হন। কেউ কেউ আবার টিকা না নিয়ে ফিরে যান।