ফার্মগেটের দুই টয়লেটে সন্তুষ্ট ব্যবহারকারীরা

আনন্দ সিনেমা হলের পাশের পাবলিক টয়লেট। ফার্মগেট, ২১ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
আনন্দ সিনেমা হলের পাশের পাবলিক টয়লেট। ফার্মগেট, ২১ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ফার্মগেটে সদা ব্যস্ত নানা রকম মানুষ। হুড়োহুড়ি করে বাসে ওঠা, গুটি গুটি পায়ে ত্বরিত চলা, ফেরি করে নানান পণ্য বিক্রি—এসব এখানকার নিত্যদিনের চিত্র। আবার অলস সময় কাটানোর লোকেরও অভাব নেই। এদের মধ্যেই অনেকের প্রয়োজন হয় টয়লেটের।

ফার্মগেটে দুটি পাবলিক টয়লেট আছে। এর একটি আনন্দ সিনেমা হলের কাছে। সেখানেই দেখা হলো নাসরিন সুলতানার সঙ্গে। আরও দুই বন্ধুকে নিয়ে ফুটপাতের পাশে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটলেন। শৌচাগারের পরিবেশ জানতে চাইলে সন্তোষ প্রকাশ করলেন।

স্নাতকপড়ুয়া এই শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ নিয়ে দুবার পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করেছি, অভিজ্ঞতা ভালো। পরিচ্ছন্নই থাকে। এ রকম থাকলে মেয়েরা পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে আগ্রহী হবে।’ আনন্দ সিনেমা হলের পাশে পাবলিক টয়লেটটির সঙ্গেই বাস বে। বাসে ওঠার জন্য অপেক্ষারত যাত্রীরা এখানে দাঁড়ান। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ওয়াটার এইড ও এফ এম ফাউন্ডেশন রাজধানীতে দৃষ্টিনন্দন ও ব্যবহার উপযোগী পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে। ওয়াটার এইড এখন পর্যন্ত দেখভালের দায়িত্বে আছে।

ফার্মগেটের এই টয়লেটে দেখা যায়, পুরুষ ও নারীদের জন্য তিনটি করে শৌচাগার রয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর পরিষ্কার করা হচ্ছে। ব্যবহারের আগে ৫ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হয়। টিকিট কাটার পর ব্যক্তিকে দেওয়া হয় টিস্যু। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এটা খোলা থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০০ জন এই টয়লেট ব্যবহার করেন।

ইন্দিরা রোডের পাশে আনোয়ারা পার্ক ঘেঁষে ফার্মগেটের অপর পাবলিক টয়লেটটির অবস্থান। এটি তুলনামূলক বড় ও দৃষ্টিনন্দন। এখানে পুরুষ ও নারীদের আলাদা পাঁচটি করে শৌচাগার আছে। এ ছাড়া আছে গোসলের ব্যবস্থা। এটি ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে।

আনোয়ারা পার্ক ঘেঁষা দৃষ্টিনন্দন পাবলিক টয়লেট। ইন্দিরা রোড, ফার্মগেট, ২১ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
আনোয়ারা পার্ক ঘেঁষা দৃষ্টিনন্দন পাবলিক টয়লেট। ইন্দিরা রোড, ফার্মগেট, ২১ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

তেজগাঁও কলেজের সামনে ফুটপাতের দোকানি মোসলেম উদ্দিন নিয়মিত এ পাবলিক টয়লেটটি ব্যবহার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশপাশের মার্কেটে টয়লেট আছে। কিন্তু যাই না। নোংরা থাকে, গন্ধে ঢোকা যায় না। সিটি করপোরেশনের যেটা, সেটাতেই যাই। পরিষ্কার থাকে।’ তবে তিনি আশঙ্কা করে বলেন, এগুলো অন্য প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করছে। সিটি করপোরেশনের লোকদের হাতে দেখভালের দায়িত্ব পড়লে এই টয়লেটগুলো পরিচ্ছন্ন থাকবে না।

ওয়াটার এইড থেকে পাবলিক টয়লেটের প্রজেক্ট ম্যানেজার এ বি এম মোবাশ্বের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীতে তাঁরা ৩৩টি পাবলিক টয়লেট তৈরি করেছেন। ফার্মগেটে দুটি টয়লেট প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি লোক ব্যবহার করে বলে জানান তিনি।

মোবাশ্বের বলেন, ‘ব্যবহারকারীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। আর ২৫ শতাংশ নারী আসেন। নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা বা আরামের বিষয়টি চিন্তা করেই হয়তো নারীরা এখনো পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে আগ্রহী না। ফার্মগেটে শৌচাগার ব্যবহারকারী নারীদের মধ্যে যৌনকর্মীর সংখ্যা বেশি। তবে অফিস যাতায়াতকারী বা শিক্ষার্থীরাও আসেন।’

সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ওয়াটার এইডের চুক্তি তিন বছরের। মোবাশ্বের হোসেন জানান, এ বছরের মার্চেই শেষ হচ্ছে চুক্তি। কিন্তু তাঁরা আরও এক বছর সময় বাড়িয়েছেন। সিটি করপোরেশন এখনই নিজেদের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। তবে পরিচ্ছন্ন ও ব্যবহার উপযোগী রাখতে কোনো করপোরেট বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।