বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুলিশের ১১০০ গুলি, ৯৩ কাঁদানে গ্যাসের শেল

গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংঘর্ষের সময় রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ
প্রথম আলো, ফাইল ছবি

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের সময় ১ হাজার ১৩৭টি গুলি (৮২৭টি রাবার ও ৩১০টি সিসা) ছুড়েছে পুলিশ। এ সময় ৯৩টি কাঁদানে গ্যাসের শেলও নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ এ বর্ণনা দিয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ ঘিরে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতা–কর্মীরা মসজিদের ভেতরে আর আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা মসজিদের বাইরে অবস্থান নেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পুলিশের সদস্যরা। মসজিদের বাইরে থেকে তখন মোদিবিরোধী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।

এ ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শক মো. শামীম হোসেন বাদী হয়ে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় দুই পক্ষের কারও রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে (সুবর্ণজয়ন্তী) বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের বাংলাদেশে আগমনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ কতিপয় বিক্ষোভকারী বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে ও মসজিদের ভেতরে সরকারবিরোধী উসকানিমূলক ও অবমাননাকর স্লোগান দিতে থাকে। তখন বায়তুল মোকাররমের ভেতরে দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে এক গ্রুপ মসজিদের উত্তর গেট দিয়ে বের হলে ভেতরে থাকা অন্য গ্রুপ তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে মসজিদের ভেতরে থাকা বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন প্রকার উসকানিমূলক ও সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দিতে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে যান। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ করলে তাঁরা পুলিশের প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তখন পুলিশ গুলি ছোড়ে।

শুক্রবারের ওই ঘটনার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে এসেছেন। সুতরাং আজ যাতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে জন্য নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল। ভেতরে নামাজ শেষ হলে যখন কিছু মুসল্লি জুতা-স্যান্ডেল দেখিয়ে মিছিল শুরু করেন, তখন অন্য মুসল্লিরা বাধা দেন।

‘তখন দুই ধরনের মুসল্লিদের মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। একটা পর্যায়ে যাঁরা জুতা-স্যান্ডেল দেখিয়েছেন, তাঁরা মসজিদের ভেতরে অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। অন্য মুসল্লিরা ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন, ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যান। পুলিশের ওপরও তাঁরা চড়াও হন। আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয়, এ জন্য রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৭২ জন আহত হন। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা ছবি তুলতে গেলেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন। কারও ক্যামেরা, কারও মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। হামলা, পুলিশের গুলি ও সংঘর্ষকারীদের ঢিলের আঘাতে অন্তত ১০ জন সাংবাদিক ও ফটোসাংবাদিক আহত হন।