‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সংস্কারকাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
ছবি: সংগৃহীত

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্মীর হাতে ক্রসফায়ার হোক, বিএনপির কর্মীর হাতে ক্রসফায়ার হোক, পুলিশের হাতে হোক, র‍্যাবের হাতে হোক বা আর্মির হাতে হোক—কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাদের অ্যাকাউন্টেবল করতে হবে।’

শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সংস্কারকাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন।

দেশে কথিত ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে বলে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনসহ নাগরিক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফে তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের নিহত হওয়ার পর এই আলোচনা আবার ব্যাপকভাবে সামনে এসেছে। প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অনুষ্ঠানেও।

অনুষ্ঠানে সমিতির সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন তাঁর বক্তব্যে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছে উল্লেখ করে বলেন, দেশে এখন দুই ধরনের বিচার চলছে। একটা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতের বিচার। আরেকটি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্রসফায়ার। তিনি বলেন, ‘এক দেশে দুটি বিচারব্যবস্থা চলতে পারে না। মেজর সিনহার যে হত্যাকাণ্ড, এটি আউটব্লাস্ট। বলব না যে শুধু এই সরকারের আমলে, সব সরকারের আমলেই হয়েছে।’ সব ক্রসফায়ারের ঘটনায় তদন্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করে মাহবুব উদ্দিন এ বিষয়ে মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। শ ম রেজাউলও একসময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ছিলেন।

শ ম রেজাউল করিম তাঁ​র বক্তব্যে বলেন, ‘আমি নিজেও মনে করি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তবে আমাদের যে লিগ্যাসিটা (ধারাবাহিকতা) আছে, সে লিগ্যাসিকে অতিক্রম করতে সময় লাগে। যখনই কোনো অপরাধের বিচার করবেন না, যখনই কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেবেন, তাদের দায়মুক্ত করবেন, তখনই কিন্তু অন্য অপরাধীরা মনে করে, কিছু তো হয় না, করে যাই।’

এ সময় মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের সাত খুন ও পুরান ঢাকার দরজি বিশ্বজিৎ দাশকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমি চাই, কোনো ক্রসফায়ার, কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বৈধতা না পাক। এ কথাও তো সত্য, অপারেশন ক্লিনহার্টে যারা জড়িত ছিল, তাদের রক্ষার জন্য একটি দায়মুক্তি অধ্যাদেশ হয়েছিল, যা সুপ্রিম কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন।’

বিচার বিভাগ স্বাধীন উল্লেখ করে মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘কিছু কিছু লোক আছে, কিছু বিচারক আছেন, সে নিজেই কিন্তু আজ্ঞাবহ হয়ে যায়। কেউ মনে করে যে খালেদা জিয়ার মামলাটি আসছে, আমি যদি এখানে কিছু ভূমিকা না রাখি, তাহলে কিসের বিএনপি করতাম? কেউ মনে করে যে আমি তো আওয়ামী লীগ করতাম, এ সময় বিএনপির একজনের মামলা ঠেকিয়ে যদি না দিতে পারি, তাহলে কিসের আওয়ামী লীগ আমি? এটি নির্ভর করে নিজের ওপর, নিজের মানসিকতার ওপর। মাইন্ড সেটআপ যদি কেউ পরিবর্তন না করে, তাহলে কিন্তু হয় না।’

সভাপতির বক্তৃতায় এ এম আমিন উদ্দিন আইনজীবীদের কোনো সমস্যা থাকলে তা সমিতিকে জানাতে বলেন। কোনোভাবেই কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় না​ দিতে আহ্বান জানান তিনি।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সমিতির কোষাধ্যক্ষ রাগীব রউফ চৌধুরী। দুজনের বক্তব্যেই আদালত অঙ্গনে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গ আসে। রাগীব রউফ চৌধুরী বলেন, আইনজীবীদের সহকারীদের (ক্লার্ক) নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। তাঁদের ব্যাপারে একটি আচরণবিধি তৈরি করা হচ্ছে।