বিশেষ পদ, দামও চড়া

রাজধানীর বেইলি রোডের একটি ইফতারির দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। গতকাল বিকেল চারটার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর প্রতিটি মহল্লাতেই খাবার দোকান আর গলির মোড়ে মোড়ে বসে গেছে ইফতারির পসরা। তবে এর মধ্যে কিছু কিছু এলাকার ইফতারির রয়েছে আলাদা রকমের খ্যাতি আর আভিজাত্য। নিউ বেইলি রোডের ইফতারি এর অন্যতম। মূলত পুরান ঢাকার ইফতারির জনপ্রিয় পদগুলো এখানে তৈরি করে আসছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। তীব্র যানজট পেরিয়ে চকবাজারে গিয়ে ইফতারি কিনতে যাঁরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, তাঁরাই যান বেইলি রোডে। এ কারণেই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বেইলি রোডের ইফতারির বাজার।

বেইলি রোডের ফখরুদ্দিন বাবুর্চির ইফতারির বাজারের খ্যাতি অনেক দিনের। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের উত্তর প্রান্তে ফখরুদ্দিনের ইফতারির বাজার বসত। এবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল ফটক বন্ধ। নোটিশ ঝুলছে স্থান পরিবর্তনের। এটি এখন চলে গেছে পাশেই সিদ্ধেশ্বরীর নিউ সার্কুলার রোডে, আগে যেখানে ছিল চাংপাই চায়নিজ রেস্টুরেন্ট। নিচের তলার সামনে তোরণ সাজিয়ে বসেছে তাদের ইফতারসামগ্রীর পসরা। ফখরুদ্দিন ফুড ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাঁর নাতিরা। তাঁদের মধ্যে কথা হলো আবদুল খালেক ও পারভেজ আহমদের সঙ্গে।

তাঁরা জানালেন, এবার জিনিসপত্রের দাম বেশি। তার ওপর নতুন জায়গা, এসব বিবেচনা করে ইফতারির আইটেম তাঁরা কিছু কমিয়ে দিয়েছেন। এখন তাঁরা প্রায় ২৫ রকমের খাদ্য তৈরি করছেন। আগে প্রায় অর্ধশত পদ থাকত। তাঁদের জনপ্রিয় পদগুলোর মধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানি ও তেহারির দাম হাফ প্লেট ২১০ টাকা, গরুর চাপ বা ভুনা কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা, খাসির চাপ কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকা, চিকেন টিক্কা প্রতিটি ৪০ টাকা, শিককাবাব ১৬০ টাকা, হালিম ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় জিলাপি ২০০ টাকা।

মগবাজার থেকে নতুন ঠিকানায় ফখরুদ্দিন ইফতারি কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে জাওয়াদ সুলতান ও তাঁর বোন ফারিয়া নূর। জানালেন, প্রতিবছরই তাঁরা ফখরুদ্দিনের ইফতারি কেনেন, বিশেষ করে হালিম ও কাচ্চি তাঁদের খুব প্রিয়। ফারিয়া জার্মানি চলে যাচ্ছেন স্নাতকোত্তর পড়তে। তাই যাওয়ার আগে প্রিয় ইফতারিগুলোর স্বাদ নিতে চান।

বেইলি রোডের আরেক জনপ্রিয় ইফতারির বাজার আয়োজন করে ক্যাপিটাল কনফেশনারি। তাদের এখানে এবার প্রায় এক শ পদের ইফতারি রয়েছে। ক্যাপিটালের জনপ্রিয় পদগুলোর মধ্যে আছে টানা পরোটা প্রতিটি ৩০ টাকা, কিমা পরোটা ৮০ টাকা, পনির পরোটা ১০০ টাকা, গরুর চাপ, কালা ভুনা, কলিজা ভুনা ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি। দই বড় বাটি ২৫০ টাকা, মালাই টিক্কা ১৮০ টাকা, মোরগ পোলাও ১৫০ টাকা।

ক্যাপিটালের স্বত্বাধিকারীদের একজন মো. শরফুদ্দিন জানালেন, ইফতার তৈরির সব উপকরণের দাম বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতা কমে গেছে, বিক্রি অর্ধেক হয়েছে। সাধারণত চাকরিজীবী মধ্যবিত্তরাই এখানে কিনতে আসেন। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াতে তাঁদের অনেকেই কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন।

এখানে কথা হলো দক্ষিণ মুগদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের সঙ্গে। তিনি বললেন, এবার ইফতারির দাম খুব বেশি। সাধারণত বাড়িতে ইফতারি তৈরি করেন। বাচ্চারা আবদার করেছে বলে কাবাব ও মাংসের কিছু পদ কিনতে এসেছেন।

বেইলি রোডের নবাবি ভোজও ইফতারির বড় আয়োজন করেছে এবার। তত্ত্বাবধায়ক মো. রফিক জানালেন, গত দুই বছর করোনার কারণে আয়োজন সীমিত ছিল। এবার তাঁরা বিরিয়ানি, তেহারি, কাবাব, কোফতা, মাসাল্লামসহ অর্ধশতাধিক পদে সাজিয়েছেন ইফতারির সম্ভার।

পশ্চিমা ঘরানার খাবার যাঁদের পছন্দ, তাঁদের জন্য ইফতারির আয়োজন আছে সুইস বেকারিতে। দাম যেহেতু চড়া, তাই ইফতারিতে এসব খ্যাতনামা খাবারের স্বাদ নিতে গেলে বাড়তি টাকা গুনতেই হবে।