বেতন-ভাতা সমন্বয়ের আশ্বাসে কাজে ফিরলেন বিমান পাইলটরা

বিমান
প্রতীকী ছবি

বেতন-ভাতা সমন্বয়ের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলটরা। তাঁরা বলেছেন, বিমানের পরিষদের আগামী সভায় বেতন কাটার বিষয়টি সমন্বয় করা হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাসের দেওয়া হয়েছে। তত দিন পর্যন্ত প্রয়োজনে কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করবেন তাঁরা।

বেতন-ভাতা নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নেতারা। বৈঠকের পর বাপা সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ১৮ মাস করোনাকালে বিমানের পাইলটরা পরিশ্রম করেছেন, এখনো করছেন। কিন্তু তাঁদের বেতনের একটা বড় অংশ কেটে রাখা হয়েছে।

মাহবুবুর রহমান বলেন, আজকের বৈঠকে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষয়টি শুনে আশ্বস্ত করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় পাইলটদের বেতনের বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
বেতন-ভাতা সমন্বয়ে দেরি হওয়ায় গতকাল সোমবার বাংলাদেশ বিমানের পাইলটরা কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ১৫৭ জন পাইলট আছেন। তাঁদের মাসিক নির্ধারিত কর্মঘণ্টা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ৬০ ঘণ্টা ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ৭৫ ঘণ্টা। ক্ষুব্ধ পাইলটদের ওই সিদ্ধান্তে গতকাল বিমানের দুটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হয়।

বাপা সদস্যরা বলছেন, গত বছর করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই পাইলটদের বেতন ন্যূনতম ৪৫ থেকে ৭৫ শতাংশ কেটে রাখা হচ্ছে। তিন মাস আগে বিমানের সব কর্মকর্তা–কর্মচারীর বেতন সমন্বয় শেষ হলেও পাইলটদের বেতন এখনো কেটে রাখা হচ্ছে।

বাপা সভাপতি মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজ করছি অথচ সম্পূর্ণ বেতন পাচ্ছি না, এ নিয়ে পাইলটদের মধ্যে একটা হতাশা কাজ করছে। এ জন্যই পাইলটরা নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করবেন না বলে গতকাল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বিমান প্রশাসন আমাদেরকে জানিয়েছে, সামনের বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা এ বিষয়ে আশাবাদী। ওই বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আমরা আছি। এর আগপর্যন্ত যদি প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা দায়িত্ব আমরা পালন করব।’

করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের ৫ মে এক প্রশাসনিক আদেশে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পাইলটদের বেতন কমানো হয়। এর মধ্যে পাইলটদের বেতন কমে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বন্ধ হয়েছে ওভারসিস অ্যালাউন্স, যা স্থায়ী বেতনের অংশ। ফলে মোট বেতন কমার হার দাঁড়িয়েছিল ৫৭ থেকে ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া বন্ধ হয় ওভারটাইম, প্রোডাকটিভিটি অ্যালাউন্স ও ফ্লাইং অ্যালাউন্স।

এরপর গত ১৩ জুলাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জারি করা এক আদেশে বলা হয়, বিমানের বেতনক্রম ৬ থেকে তদূর্ধ্ব তথা সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন কাটার হার কমিয়ে শূন্য করা হয়েছে। আর যেসব পাইলট ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত চাকরি করছেন, তাঁদের বেতন কাটার হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
আদেশে আরও বলা হয়, যাঁরা ১০ বছরের বেশি সময় কাজ করছেন, তাঁদের বেতন কাটার হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের পরে পাইলটরা ৩০ জুলাই থেকে আন্দোলনে যাওয়ার ডাক দেন। তখন তাঁদের বেতন-ভাতা সমন্বয়ের বিষয়ে বিমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।