বৈশাখের জোয়ার নগরের বিপণিবিতানগুলোতে

বাংলা নববর্ষ বরণ করতে নতুন পোশাকের বেচাকেনা বাড়ছে। বিপণিবিতানগুলোতে উঠেছে বাহারি রং ও নকশার পোশাক। গতকাল বনানীর একটি দোকানে।  ছবি: প্রথম আলো
বাংলা নববর্ষ বরণ করতে নতুন পোশাকের বেচাকেনা বাড়ছে। বিপণিবিতানগুলোতে উঠেছে বাহারি রং ও নকশার পোশাক। গতকাল বনানীর একটি দোকানে। ছবি: প্রথম আলো

কালের যাত্রা নিরন্তর। কদিন বাদেই বাঙালির ঘরের দেয়ালে ঠাঁই নেবে নতুন বছরের বর্ষপঞ্জি। আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের অংশ হিসেবে সকালবেলায় পাতে থাকবে পান্তা-ইলিশ, পরনে নতুন পিরান। পোশাকের জোগান দিতে রাজধানীর বিপণিবিতানগুলো এনেছে বর্ণিল রং ও নকশার পোশাক।

পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিটি দোকানেই ওঠানো হয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তা, ফতুয়া, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, ওড়না। গতকাল রোববার রাজধানীর বসুন্ধরা শপিংমল, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, মিরপুরের শাহ্ আলী প্লাজা, মোহাম্মদিয়া মার্কেট ও নিউমার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, পোশাকের বাজারে এবার সাদা রঙের দাপট। তবে লাল-সাদা রঙের পোশাকের আবেদন আগের মতোই আছে বলে জানান বিক্রেতারা। উজ্জ্বল রঙের পোশাক-পরিচ্ছদের উপস্থিতিও বেশ নজর কাড়ে।

ঈশিতা হাসান বন্ধুকে নিয়ে বসুন্ধরা শপিং মলে এসেছেন পয়লা বৈশাখের পোশাক কিনতে। বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে তিনি দেশি দশের ফ্যাশন হাউস নিপুণ থেকে সাদা জমিনে লাল স্ক্রিন প্রিন্টের একটি সালোয়ার-কামিজ কেনেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, গরমে সাদা রঙের পোশাকে যেমন আরাম মেলে, তেমনি সাদার স্নিগ্ধতা মুগ্ধকর। এর সঙ্গে লাল রঙের ছাপায় উৎসবের আমেজ আসবে।

রাঙামাটির মেয়ে হেনা চাকমা প্রশিক্ষণ নিতে ঢাকায় এসেছেন। থাকবেন কিছুদিন। বৈশাখের কেনাকাটা তিনি ঢাকা থেকেই করতে চান। এর অংশ হিসেবে গতকাল দুপুরে ঢুঁ মেরেছেন আজিজ সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউস নোঙরে। হেনা বলেন, ‘শুধু উৎসবের দিন নয়, অন্য সময়ও অফিসে পরা যায় এমন পোশাক নির্বাচন করি। এ ক্ষেত্রে পোশাকের রং, ডিজাইন ও কাপড়ের গুণগত মান প্রাধান্য দিই।’

বিক্রেতারা বলছেন, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে তাঁরা সপ্তাহখানেক আগ থেকে পোশাক তুলতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ নকশার পোশাক চলে এসেছে। তবে বিক্রিবাট্টা এখনো তেমন জমেনি। আর দিন পাঁচেক পরে মূল কেনাবেচা শুরু হবে। ফ্যাশন হাউস বকুলসের স্বত্বাধিকারী মো. বকুল বলেন, ক্রেতাদের বড় অংশ এখন পোশাক বিভিন্ন দোকান ঘুরে যাচাই করছেন। মূল বিক্রি শুরু হবে এই শুক্রবার থেকে।

পোশাকে বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে নকশায় বেশ বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। পোশাকে বিভিন্ন গান-কবিতার লাইন, প্রাণী, ফুল, লতা-পাতা, নারীর অবয়ব, তালের পাখা, ঢাকঢোলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো পোশাকে আবার গ্রামীণ বাংলার চিরায়ত দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দেশালের এক পোশাকে দেখা যায়, গ্রামের বধূ পিঁড়িতে বসে বঁটি দিয়ে মাছ কাটছে।

নোঙরের মালিক ও পোশাকের নকশাকার মৃণাল হাওলাদার বলেন, পয়লা বৈশাখের পোশাকে দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। এ জন্য নানান লোকজ মোটিফ ব্যবহার করা হয়। তবে ভিন্নতা আনতে পোশাকের কাটিংয়ে পাশ্চাত্যের ঢং দেওয়া হয়।

আবহাওয়াকে মাথায় রেখে সুতি, খাদি, লিনেন ও তাঁতের কাপড় বেশি আনা হয়েছে বলছেন বিক্রেতারা। এসব পোশাকে এমব্রয়ডারি, ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হাতের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

ফ্যাশন হাউস নিপুণের ব্যবস্থাপক পূজা রড্রিক বলেন, পোশাকের কাপড় ও নকশার বিষয়ে ক্রেতাদের স্বস্তির বিষয় মাথায় রাখা হয়েছে।

সর্বজনীন এই বাঙালি উৎসবে পরিবারের সবাই মিলে একই রঙের পোশাক পরার চল কয়েক বছর ধরে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই চাহিদাকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন হাউসগুলো পারিবারিক পোশাক আনছে। এতে একই রং ও নকশার ছোট-বড়দের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি মিলছে। এর অংশ হিসেবে ফ্যাশন হাউস নগরদোলার সামনের অংশে পাঁচটি ম্যানিকুইনে সাজানো রয়েছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ।

ব্যবসায়ী সামিউল হোসেন স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে দোকানে দোকানে ঢুঁ মারছেন ফ্যামিলি পোশাক কিনবেন বলে। তিনি বলেন, উৎসবে সবাই মিলে একই পোশাক গায়ে জড়িয়ে বেড়াতে যাওয়ার অনুভূতি অন্য রকম। এতে পারিবারিক বন্ধন শক্ত হয় বলে মত তাঁর।

বিপণিবিতানের পাশাপাশি নিউমার্কেট ও মিরপুরের গজ কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের বেশ ভিড়। কাপড় কিনে দরজিবাড়ি থেকে পছন্দসই ডিজাইনে বানিয়ে নেবেন তাঁরা। এতে খরচ কিছুটা কমে আবার নিজের মনমতো পোশাক মেলে বলে জানান রিশা সুলতানা।