‘ব্যক্তির অপরাধে গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ কাম্য নয়’

সুনামগঞ্জ শাল্লা উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও বাড়িতে হামলা, লুটপাট ভাংচরের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ মানববন্ধন করে। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: সাজিদ হোসেন

ব্যক্তির অপরাধের কারণে কোনো গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের ঘটনা কাম্য নয়। দেশে বারবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে। এসব ঘটনার বিচার হয় না। বিচারহীনতার কারণে হামলা-নির্যাতনের ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে। এসব ঘটনার দ্রুত বিচার করতে হবে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে এক মানববন্ধন থেকে এসব কথা বলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, তাদের সহায়-সম্পত্তি লুট করা হয়েছে। এর আগে নাসিরনগর, রামু, সাঁথিয়া, মুরাদনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে। এসব ঘটনার বিচার হয়নি। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিবাদ জানাতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির কোনো আশ্রয় নেই।

সাবেক সাংসদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান পরিষদের অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা উষাতন তালুকদার বলেন, এ দেশে কীভাবে এমন সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটে, তা দুঃখজনক। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। অথচ সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা নেই। শাল্লার হামলার ঘটনায় বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এভাবে চলতে পারে না। শাল্লার ওই হামলার সময় প্রশাসন কোথায় ছিল? যাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, তাদের নামেও তদন্ত হওয়া উচিত।

শাল্লার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ওপর হামলা উল্লেখ করে বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের নেতা নির্মল রোজারিও বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভাবতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশ্বাসীরা এগুলো করতে পারেন না।

সুনামগঞ্জ শাল্লা উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও বাড়িতে হামলা, লুটপাট ভাংচরের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ মানববন্ধন করে। প্রেসক্লাব, ২০ মার্চ
ছবি: সাজিদ হোসেন

বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘শাল্লায় হিন্দুদের ওপর যে নির্যাতন, বাড়ি-মন্দির ভাঙচুর করা হলো, প্রশাসন আজ কোথায়? স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার কথা বলতে হচ্ছে। এগুলো আর কত দিন চলবে?’

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পালের প্রশ্ন, ‘একজন অন্যায় করলে কোনো পরিবার, গোষ্ঠী বা গ্রামবাসীর ওপর কেন আক্রমণ করা হবে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

মানববন্ধনে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জেমস সুব্রত হাজরা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ, বাসুদেব ধর, সাংগঠনিক সম্পাদক দীপঙ্কর ঘোষ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কর্মসূচিতে বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি তোপখানা সড়ক ঘুরে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

১৭ মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লায় মাওলানা মামুনুল হক সমাবেশে বক্তব্য দেন। এরপর স্থানীয় এক যুবকের ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে শাল্লায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় গ্রামের অন্তত ৯০টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাট চালানো হয়