ভাটা পড়েছে মশকনিধন কার্যক্রমে

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

মশা মারার ফগার যন্ত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন দুজন মশকনিধনকর্মী। তা দেখে স্থানীয় এক বাসিন্দা তাঁদের বাড়ির আঙিনায় ওষুধ ছিটাতে অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকার কারণ দেখিয়ে মশকনিধনকর্মীরা সেখানে ওষুধ ছিটাতে রাজি হচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে খানিকটা ফগিং করে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান।

গত রোববার বিকেলে সিদ্ধেশ্বরী রোড এলাকায় এমন চিত্র চোখে পড়ে। এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। গত শনি ও রবি এবং গতকাল সোমবার ডিএসসিসি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মশকনিধনের তেমন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, এলাকায় নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। আর দুই সিটি সূত্র বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে মশকনিধনকর্মীরা মশার ওষুধ ছিটানোর যন্ত্র দিয়ে জীবাণুনাশক তরল ছিটানোর কাজ করছেন। এতে মশকনিধন কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

ডিএসসিসি: ডিএসসিসির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন সাতজন। গত রোববার সরেজমিনে দুজনকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা গেছে।

ওয়ার্ডে মশকনিধনকর্মীদের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন মো. হানিফা। গত রোববার দেখা যায়, সিদ্ধেশ্বরী রোডে মো. হানিফা ও এমদাদ হোসেন একটি ফগার যন্ত্র দিয়ে ওষুধ ছিটাচ্ছেন। বাকি কর্মীরা কোথায়, জানতে চাইলে মো. হানিফা বলেন, আবুল বাশার সরকার ও আলী হায়দার সকালে কাজ করেছেন। তোফায়েলের মেয়ে অসুস্থ, তাই তিনি আসেননি। রেজাউল করিম বাসায় আছেন। হাফিজ, এমদাদসহ তাঁরা তিনজন বিকেলে ওষুধ ছিটাচ্ছেন।

গত রোববার বিকেলে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে মশকনিধনকর্মীদের কোথাও পাওয়া যায়নি। কাগজে–কলমে এই ওয়ার্ডে মশকনিধনকর্মী আছেন আটজন। রোববার বিকেলে চারজনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁদের কেউ ফোন ধরেননি। পরে ওয়ার্ডের মশকনিধনকর্মীদের সমন্বয়ক শাহজাহান ইমরান বলেন, মশকনিধনকর্মীরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তবে জরুরি হলে ওষুধ ছিটানো হয়।

গতকাল সোমবার সকালে ডিএসসিসির ২১ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে মশকনিধনকর্মীদের ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। তবে বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় একজনকে ফগিং করতে দেখা গেছে।

২১ নম্বর ওয়ার্ডে মশকনিধনকর্মী আছেন সাতজন। গতকাল সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত সাতজনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কেউ ফোন ধরেননি।

নিয়মিত ওষুধ না ছিটানোর কারণ জানতে চাইলে ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এম এ হামিদ খান প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মশকনিধনকর্মীরা জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ করছেন।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরীফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, একটি ওয়ার্ডে ছয়টি স্প্রে মেশিন থাকলে তিনটিতে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। বাকি তিনটি দিয়ে জীবাণুনাশক পানি ছিটানো হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে একজন মানুষকে একাধিক কাজ করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে যাঁরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন, তাঁদের জীবন, নিরাপত্তা, সুরক্ষা—সবই চিন্তা করতে হচ্ছে। মশকনিধনকর্মীরা সাধ্যমতো কাজ করার চেষ্টা করছেন।

ডিএনসিসি: মধ্য বাড্ডায় মূল সড়কের পাশে শনিবার সন্ধ্যার আগে ভ্যানে ফল বিক্রি করছিলেন মো. হোসেন। সেখানে উড়ছিল এক ঝাঁক মশা। কয়েকজন ক্রেতাও ছিলেন দোকানের সামনে। মশার যন্ত্রণায় তাঁরা স্বস্তিতে দাঁড়াতে পারছেন না। হাত নেড়ে চারপাশ থেকে মশা তাড়াচ্ছেন।

ফল কিনতে আসা আফিফ হক বলেন, ‘মশার উপদ্রব একটুও কমেনি। এলাকায় মশার ওষুধ দেওয়াও বন্ধ।’

শনিবার সকালে বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও এলাকায় কোনো মশকনিধনকর্মীকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। এ ছাড়া বিকেলে ফগার মেশিনও চলে না বলে জানান এসব এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা।

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে মশার ওষুধ ছিটানোর যন্ত্র দিয়েও জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। মশকনিধনকর্মী ও সরঞ্জামের বেশির ভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজে।

ডিএনসিসির কয়েকজন মশকনিধনকর্মী বলেন, সিটি করপোরেশনের তালিকা অনুযায়ী সপ্তাহে দুদিন সকালে লার্ভিসাইডিং ও বিকেলে ফগিং করার কথা থাকলেও আগের নিয়ম এখন কার্যকর নেই। ডিএনসিসির কর্মীরা করোনাভাইরাসের দিকে মনোযোগী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মশকনিধনকর্মী বলেন, ‘মশা মারার সরঞ্জাম দিয়ে ভাইরাসমুক্ত করার কাজ চলছে। মশা মারব কী দিয়ে?’

মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রকল্পের পূর্ব অংশে প্রকল্প এলাকার সীমানা। আগে এখানে সকাল-বিকাল মশার ওষুধ ছিটানো হতো বলে জানান কয়েকজন বাসিন্দা। এখন তা বন্ধ।

করোনাভাইরাসের কারণে মশকনিধনের কাজে অসুবিধা হচ্ছে কি না? জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোমিনুর রহমান গত শনিবার বলেন, ‘জীবাণুনাশক ছিটানো নিয়ে কিছুটা সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। মশার উৎস ও প্রজননস্থল ধ্বংসে লার্ভিসাইডিং করার সরঞ্জাম দিয়ে সকাল-বিকেল তরল জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে।’ কয়েক দিন ধরে কিছু অতিউৎসাহী ব্যক্তি মাঠপর্যায়ে মশা মারার সরঞ্জাম দিয়ে তরল জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন বলে তিনি মনে করেন।

মোমিনুর রহমান আরও বলেন, ‘হ্যান্ড স্প্রে দিয়ে জীবাণুনাশকের কাজ চলছে। আমি মেয়রকে জানিয়েছি, এ জন্য কাউন্সিলরদেরও চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি। মেয়রকে বলেছি, করোনার কাজও করতে হবে। তবে ডেঙ্গুর কাজও বন্ধ করা যাবে না। কারণ, আবার এডিসের মৌসুম শুরু হচ্ছে। মশা বাড়ছে।’

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ১০ দিনের ছুটিতে অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। নির্মাণকাজও বন্ধ। এ সময় এসব জায়গায় এডিস মশা ডিম পাড়তে পারে। সেগুলোতে সিটি করপোরেশনের ঢোকার সুযোগ নেই।

এসব নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরের জমে থাকা পানি ভবনমালিকদের পরিষ্কার করার অনুরোধ জানান এই কর্মকর্তা।