ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখে সড়ক থেকে বাস উধাও

অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এবং ডিএমপি।

গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেটসংলগ্ন এলাকায় গতকাল দুপুরে রুট পারমিটবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ।
ছবি: প্রথম আলো

রুট পারমিটবিহীন গাড়ি জব্দ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসার আগেও সড়কে গাড়ির চাপ ছিল। কিন্তু আদালত বসার কিছুক্ষণ পরই সড়ক থেকে উধাও হয়ে গেল যানবাহন। এতে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। এমন পরিস্থিতি ছিল প্রায় দেড় ঘণ্টা।

গতকাল বুধবার দুপুরে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেটসংলগ্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চলার সময় এমন চিত্র দেখা গেছে। রুট পারমিটবিহীন গাড়ি এবং এক রুটের গাড়ি আরেক রুটে চলাচলের বিরুদ্ধে এ অভিযান যৌথভাবে পরিচালনা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালত বসার কিছুক্ষণ পরই সেখানে কিছু ব্যক্তি হাজির হন। তাঁরা মুঠোফোনে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিদের এই পথে না আসার নির্দেশনা দেন। এ সময় আগত ব্যক্তিদের সেখানে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের সঙ্গেও একান্তে আলাপ করতে দেখা গেছে। আগন্তুক ব্যক্তিরা মুঠোফোনে আলাপচারিতার পাঁচ মিনিট পরেই এই পথ হয়ে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা কমতে থাকে। একপর্যায়ে বিআরটিসি ও ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া দেড় ঘণ্টার মতো এই সড়কে অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করেনি।

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে গঠিত বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল থেকে রুট পারমিটবিহীন গাড়ি জব্দ করতে অভিযান শুরু হয়। এর আগে কমিটির ১৯তম সভা শেষে গত রোববার কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীতে বর্তমানে ১ হাজার ৬৪৬টি বাস রুট পারমিট ছাড়াই চলাচল করছে। ১ ডিসেম্বর থেকে রুট পারমিটবিহীন এসব বাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে।

হুঁশিয়ারি দিয়ে মেয়র তাপস বলেন, এ অভিযানে কেবল জরিমানাই হবে না, বাসগুলো জব্দ ও ধ্বংস করা হবে। যাতে এই বাসগুলো কোনোভাবেই সড়কে আসতে না পারে। এ ছাড়া যে পথে রুট পারমিট আছে, সে পথে না চালিয়ে অন্য পথে চলা বাসের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে।

গতকালের অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পরেই অন্য একটি কর্মসূচিতে গুলিস্তান এলাকা পরিদর্শনে আসেন মেয়র তাপস। এ সময় তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে বলেন, রুট পারমিটবিহীন গাড়ি জব্দ করতে হবে। কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।

গতকাল আরও দেখা যায়, আগন্তুক ব্যক্তিরা মুঠোফোনে আলাপের পরও যেসব গাড়ি এই রুট হয়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিল, সেসব গাড়িকে হাতের ইশারা দিয়ে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালত চত্বর পার হওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন। এমন একাধিক ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তাঁরা সাংবাদিক পরিচয় জেনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে জলিল নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি গুলিস্তান এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করেন। তাহলে হাতের ইশারা দিয়ে গাড়ি পার করে দিচ্ছেন কেন, এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি। কিসের ব্যবসা করেন, জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। জলিলকে তাঁর পাশে থাকা ব্যক্তিকে মতিন নামে সম্বোধন করতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বাসচালক ও সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগত ব্যক্তিরা এই রুটে চলাচলকারী বাসের মালিকপক্ষ। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসলে তাঁরা ঘটনাস্থলে এসে রুট পারমিটবিহীন গাড়ি অভিযানের হাত থেকে বাঁচাতে নানা তৎপরতা চালান। অবশ্য এর সত্যতাও দেখা গেল। এমন এক ব্যক্তি সেখানে ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর ব্যক্তিমালিকানার একটি গাড়িতে উঠে ওই স্থান ত্যাগ করেন।

এদিকে আদালত বসার পরপরই কয়েকটি গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করা হলে কয়েকটি অসংগতি পাওয়া যায়। এর মধ্যে কারও রুট পারমিট ও ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। তবে কাগজপত্র যাচাই করতে থামানো গাড়ির বেশির ভাগেরই রুট পারমিট পাওয়া গেছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার শেষ পর্যায়ে এসে দুটি গাড়ি জব্দ করে ডাম্পিংয়ে পাঠাতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ওয়েলকাম পরিবহন নামের একটি গাড়ি ছিল। এটি গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে মতিঝিল রুটে চলাচল করে। আরেকটি দাউদকান্দি সুপার গেটলক সার্ভিস লিমিটেড। এটি ঢাকা থেকে দাউদকান্দি রুটে চলাচল করে।

গতকালের অভিযানে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, রুট পারমিট না থাকায় দুটি গাড়ি ডাম্পিংয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রুট পারমিট ও ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় সাভার, শ্রাবণ, হিমাচল, ট্রান্স সিলভা, দোলা ও গ্রিন ঢাকা পরিবহনের একটি করে মোট ছয়টি গাড়িকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের দক্ষিণ সিটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন আবদুস সামাদ সিকদার।