ভ্রাম্যমাণ শৌচাগারে আগ্রহ কম
পথচারী ও ভাসমান লোকজনের ব্যবহারের উপযোগী ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার আছে ৩৬টি। গণশৌচাগারের তীব্র সংকট থাকায় এগুলো হতে পারত বিকল্প। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ না থাকায় সব শ্রেণির মানুষ এসব ব্যবহারে তেমন আগ্রহী নয়।
২০১১ সালে বেসরকারি সংস্থা নগর গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৫৫ লাখ মানুষের গণশৌচাগার ব্যবহারের চাহিদা আছে। দুই সিটি করপোরেশনের ৬৯টি গণশৌচাগার থাকলেও তার মধ্যে মাত্র ৪৭টি ব্যবহারের উপযোগী বলে ওই গবেষণায় বলা হয়। তবে এর মধ্যে বেশির ভাগই নারী, প্রতিবন্ধীদের ব্যবহারের উপযোগী নয়। এ ছাড়া শহরে আছে কয়েক লাখ ভাসমান জনগণ, যারা রাস্তার ধারে ও পার্কে মলমূত্র ত্যাগ করে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অ্যাসোসিয়েশন ফর রিয়েলাইজেশন অব বেসিক নিড্স (আরবান) ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোবাইল টয়লেট বা ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার বসানোর প্রকল্প হাতে নেয়। চার বছর ছয় মাস (১ নভেম্বর ১১ থেকে ৩১ মার্চ ১৬) মেয়াদি প্রকল্পটি ওয়াটার এইড বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে।
ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার একটি বিকল্প ব্যবস্থা। যেখানে গণশৌচাগার নেই বা গণশৌচাগার স্থাপন করার মতো প্রয়োজনীয় জায়গা বা অবকাঠামোগত সুবিধা নেই; অথচ পথচারী ও চলমান বা ভাসমান মানুষের সমাগম অনেক বেশি, সেখানে স্বল্প পরিসরে ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার স্থাপন করা যায়।
প্রকল্পের আওতায় আরবান এ পর্যন্ত মোট ৪৬টি ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার বানিয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে সেবারত অবস্থায় আছে। বাকি শৌচাগারগুলো বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে সেবা দেওয়ার জন্য।
আরবানের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. শহীদ উল্লাহ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, এই টয়লেটগুলোর চাহিদা আছে। কিন্তু যেখানেই স্থাপন করতে চাই, বাধার সম্মুখীন হতে হয়। জায়গা নির্ধারণ, পানি, বিদ্যুৎ, বর্জ্য অপসারণসহ নানা বিষয় জড়িত বলে চাহিদা থাকলেও বাড়ানো যায়নি। আর আমাদের দেশে এমন টয়লেট বানানোর সুবিধাও তেমন নেই।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বসানো ভ্রাম্যমাণ শৌচাগারগুলো ব্যবহারে সব শ্রেণির মানুষ আগ্রহী হচ্ছে না। কয়েকটি শৌচাগার বাদে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের লোকজনই বেশি ব্যবহার করছে। পান্থকুঞ্জ পার্কের পাশেই আছে একটি ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার। এর আশপাশে আছে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। প্রতিদিন হাজারো লোকজন এ পথে চলাচল করে। কিন্তু শৌচাগারটি ব্যবহার করে পার্কের আশপাশের ভাসমান লোকজন।
এই শৌচাগারের সামনেই কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমান ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট নেই। পাবলিক টয়লেট বানানো সময়সাধ্য ব্যাপার। মোবাইল টয়লেট বিকল্প হতে পারত, কিন্তু এগুলোর পরিবেশ আরও ভালো করতে হবে। বিশেষ করে নারীদের জন্য ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে।
ভ্রাম্যমাণ শৌচাগারগুলো প্রতিবন্ধী, দরিদ্র বেকার মানুষের কর্মসংস্থানেও ভূমিকা রাখতে পারে। আরবান চুক্তিভিত্তিক দুটি ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার একজন পরিচালনাকারীকে বন্দোবস্ত দিয়ে থাকে। প্রতিদিন প্রতিটি শৌচাগারের জন্য ১০ টাকা হারে মূল্য পরিশোধ করে। তিন বছর পর দুটি মোবাইল টয়লেটের মালিকানা হয়ে যায় তার। এক জোড়া ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার থেকে মাসে কমপক্ষে ৮ হাজার ৫০০ টাকা উপার্জন হয় বলে চারজন পরিচালনাকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
ষাটোর্ধ্ব মো. আমিন উদ্দিন জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন কল্যাণপুরের বেলতলী বস্তিতে। ২০১১ সালে আরবানের কাছ থেকে দুটি ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার নিয়ে টেকনিক্যাল মোড়ে বসান। এখন প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় হয় তাঁর। অথচ আগে ভিক্ষা করে কোনোমতে জীবিকা চালাতেন আমিন উদ্দিন। আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে মাইনষের কাছে হাত পাতি চলতাম। এহন নিজে কামাই করি। একটা মাইয়া স্কুলে যায়।’