শাকে–মাছে ভরা রাজধানীর ভোরের বাজার

ঢাকায় অনেক এলাকায় সড়কে ভোরের আলো ফোটার পরপরই ঘণ্টা দুই-তিনেকের জন্য বাজার বসে যায়।

গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে
ছবি: দীপু মালাকার

হেমন্ত প্রায় শেষ হয়ে এল। শীত পড়ছে দেশজুড়ে। আকাশে কুয়াশা জমছে। হাওয়াও শীতল হয়ে এসেছে। গ্রামগঞ্জে এখন আমন ধান কাটা নিয়ে কর্মচাঞ্চল্য। আর অন্য রকম এক আনন্দঘন ব্যতিব্যস্ততা দেখা যায় মাছ ধরা নিয়ে।

হেমন্তের শুরু থেকেই বিলঝিল, ডোবা ও পুকুরের পানি কমতে থাকে। বছরের এ সময়ে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া জলাশয়ে মাছ ধরার আনন্দে মেতে থাকে ‘মাছে–ভাতে’ বেঁচে থাকা বাঙালি। আবহমানকাল থেকেই এই রীতি চলে আসছে।

হালকা শীতের দিনে মিঠে রোদ গায়ে মেখে পুকুর–ডোবা সেচে, কাদা ঘেঁটে অথবা জাল, পলো দিয়ে নানা জাতের মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। অধিকাংশই অবশ্য পুঁটি, ট্যাংরা, মলা, খলসে, শোল, টাকি—এসব। আগে কই, শিং, মাগুর প্রচুর পাওয়া যেত। এখন অবশ্য তা কম।

বাড়ির ছেলেপুলের ধরা মাছ সাধারণত বাজারে ওঠে না। পরিমাণে বেশি হলে অথবা পেশাদার জেলেরা ধরলে বাজারে দেশি মাছের দেখা মেলে। শীত পড়তে শুরু করার পর রাজধানীর বাজারেও এসব দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকায় এখন অনেক এলাকায় ভোরের আলো ফোটার পরপরই ঘণ্টা দুই–তিনেকের জন্য মাছ ও শাকসবজির বাজার বসে যায়। বেচাকেনাও হয় প্রচুর। সাধারণত প্রাতর্ভ্রমণে বের হওয়া স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিকেরাই এসব বাজারের প্রধান ক্রেতা। এ রকম একটি জমজমাট বাজার বসে শান্তিনগর মোড় থেকে মালিবাগ মোড় পর্যন্ত সড়কে। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকেই নানা জাতের মাছ ও শাকসবজির পসরা বসতে শুরু করে। সকাল ৮টার দিকেই রাস্তা পরিষ্কার।

ধানমন্ডির সাত মসজিদ রেডের ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশেও এ ধরনের মাছের বাজার বসে। এ ছাড়া কারওয়ান বাজারে এ ধরনের বাজার বসে।

শান্তিনগর এলাকার এই প্রভাতি মাছের বাজারে গতকাল সোমবার দেখা গেল, চাষের রুই, কাতলা, পাঙাশ, সিলভার কার্পের মতো মাছের পাশাপাশি দেশি ট্যাংরা–পুঁটির উপস্থিতিও যথেষ্ট। বিক্রেতা মনির হোসেন, আকরাম মিয়াসহ বেশ কয়েকজন জানান, ভৈরবের কুলিয়ার চর, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব দেশি মাছ আসে। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর মাছও পাওয়া যায় এই বাজারে। নদীর ছোট মাছের মধ্যে আছে চাপিলা, কাচকি—এসব। দাম তিন শ থেকে সাড়ে তিন শ টাকা কেজি।

দেশি ছোট পুঁটি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, মেনি ও মলা ৪০০ টাকার আশপাশে, ট্যাংরা, গচি ও ছোট বাইম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, আইড়-বোয়াল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শোল আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা ও টাকি মাছ ৩০০ টাকা কেজির মধ্যে বিক্রি হয়। চাষের পাবদা ও গুলশা এখন সর্বত্রই পাওয়া যায়। আকারভেদে এর দাম প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। রুই-কাতলার কেজি ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা। চাষের শিং-মাগুর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সস্তার মাছের মধ্যে আছে পাঙাশ, কই ও তেলাপিয়া।

বাজার ঘুরে দেখা গেল, শীতের শাকসবজির দামও কমে এসেছে। লালশাক, পালং, পুঁই, মুলা, কলমি, শর্ষে ইত্যাদি শাক বেশ কেনাবেচা হচ্ছে। দাম প্রতি আঁটি ১০ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন আঁটি ২০ টাকায় ছেড়ে দেন বিক্রেতা।