মালিকদের অসহযোগিতার ‘অজুহাত’ ছয় বছর পরও

বিশৃঙ্খলা বন্ধে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এখনও বলা হচ্ছে, মালিকেরা সহযোগিতা করছেন না।

  • বুধবার থেকে ঢাকায় রুট পারমিটবিহীন ১,৬৪৬টি বাসের বিরুদ্ধে অভিযান।

  • অভিযানে এসব বাস জব্দ করে ধ্বংস করা হবে।

ফাইল ছবি

কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর রুটে আগামী বুধবার থেকে যে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বিশেষ বাস সেবা চালুর কথা ছিল, তা হচ্ছে না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রেরা জানিয়েছেন, বাসমালিকদের ‘অসহযোগিতার’ কারণে বিষয়টি পিছিয়ে গেছে। তবে সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাস নিয়ে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে এ রুটে পরীক্ষামূলকভাবে এই বিশেষ বাস সেবা চালু হবে।

ঢাকার বাস সেবায় বিশৃঙ্খলা বন্ধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক বাসগুলোকে রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ২০১৫ সালে। তখন বলা হয়েছিল, পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় বাস উঠিয়ে দিয়ে নতুন চার হাজার বাস নামানো হবে। একই কোম্পানির অধীনে পরিচালিত হওয়ায় বাসে বাসে প্রতিযোগিতা হবে না, দুর্ঘটনা কমবে ও যাত্রীসেবার মান বাড়বে।

২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর এই ব্যবস্থা চালুর দায়িত্ব যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ওপর। তিনি মোট ১১টি সভা করেছিলেন। নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সভা করেছেন ছয়টি। এত দিন পরও মালিকদের অসহযোগিতার অজুহাতই দেখানো হলো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে গতকাল রোববার দুপুরে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি’র ১৯তম

সভা শেষে দক্ষিণ সিটির মেয়র ও রুট রেশনালাইজেশন কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, গণপরিবহন খাতে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত যে বিশৃঙ্খলা, এ বিশৃঙ্খলায় অনেক অংশীজন রয়েছেন। সবাইকে শৃঙ্খলায় আনা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। তবে ব্যবস্থাটি চালু করতে তাঁরা সংকল্পবদ্ধ।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বাসমালিকেরা ঘাটারচর-কাঁচপুর রুটে বাস দেওয়ার জন্য যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁরা সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি। এ কারণে বিআরটিসির সহযোগিতা নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। রুট অবশ্যই চালু করবেন জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘আমরা কারও কাছে জিম্মি হতে চাই না।’

বাসমালিকদের অসহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে সভা শেষে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাংবাদিকদের বলেন, এখানে একটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। মেয়র আনিসুল হকের সময় থেকেই তাঁরা সহযোগিতা দিয়ে আসছেন।

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি জানিয়েছে, আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১০০টি বাস দিয়ে ঘাটারচর-কাঁচপুর রুটে পরীক্ষামূলক ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থা চালু হবে। এতে শুরুতে থাকবে বিআরটিসির ৩০টি বাস। বাকি ৭০টি বাস ঠিক করতে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। বাস দিতে আগ্রহীদের আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। উল্লেখ্য, এর আগে দুই দফা বিশেষ বাস সেবা চালু পিছিয়ে গিয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ঢাকায় গণপরিবহনগুলোর মালিকের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। ঢাকা ও আশপাশে ২০০-এর বেশি রুটে বাস চলাচল করে। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে মালিকেরা বিনিয়োগের হার অনুসারে লভ্যাংশ পাবেন।

নগর ভবনে অনুষ্ঠিত সভা সূত্র বলছে, আগের সভায় মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কমিটিকে বলা হয়েছিল, ঢাকায় ২০১৯ সালের পর নামানো ৪২০টি বাসের রুট পারমিট এখনো হয়নি। রুট পারমিট পেলে সেখান থেকে ১২০টি নতুন বাস ঘাটারচর-কাঁচপুর রুটে দেওয়া হবে। তবে দেখা যায়, বাসমালিকেরা যে ১০৪টি বাসের তালিকা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে মাত্র ৬টি শর্ত পূরণ করেছে।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাসমালিকেরা কথার বরখেলাপ করেছেন। আমরা জাতির সামনে সময় দিচ্ছি, সেই সময় রক্ষা করতে পারছি না।’

এদিকে সভা শেষে জানানো হয়, আগামী বুধবার থেকে ঢাকায় রুট পারমিটবিহীন ১ হাজার ৬৪৬টি বাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। অভিযানে কেবল জরিমানাই হবে না, সেগুলো জব্দ করে ধ্বংস করা হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, মালিকেরা ‘কথা না রাখায়’ বেশ ক্ষুব্ধ হন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বাসমালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘ঢাকাবাসীকে জিম্মি করে এই অরাজকতা দিনের পর দিন চলবে না। আই উইল মেক ইট হ্যাপেন (আমি এটা করে দেখাব)।’